পাতা:বাংলায় ভ্রমণ -প্রথম খণ্ড.pdf/২০৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

SSર * বাংলায় ভ্রমণ হইয়াছিল ; কিন্তু ব্যয় বাহুল্যের জন্য গবর্ণমেণ্টকে এই পরিকল্পনা বাধ্য হইয়া পরিত্যাগ করিতে হয়। সেই সময়ে দ্বীপটির ফ্রেজারগঞ্জ নূতন নামকরণ হয়। রাস্ত ঘাট প্রভৃতি নিৰ্মাণকালে অনেকগুলি পুরাতন অট্টালিকার ধ্বংসাবশেষ এবং চারটি ইটখোলা দৃষ্ট হয়। সুন্দরবন-বাংলাদেশে সুন্দরবনের মত অরণ্য আর একটিও নাই। হিমালয়ের পাদদেশে তরাইয়ের প্রসিদ্ধ জঙ্গলও এত বড় ও এত বৈচিত্র্যপূর্ণ নয়। ২৪ পরগণা, খুলনা ও বাখরগঞ্জ এই তিনটি জেলার দক্ষিণাংশ জুড়িয়া বঙ্গোপসাগরের উপকূলে সুন্দরবন দৈর্ঘ্যে পূর্ব-পশ্চিমে ১৮০ মাইল ও প্রস্থে স্থানভেদে ৬০ হইতে ৮০ মাইল পৰ্য্যন্ত বিস্তৃত। সুন্দরবনের পশ্চিমে ভাগীরথী এবং পূর্বে মেঘনা । এই দুই প্রান্তের উচ্চ ভূমি হইতে জমি ক্রমশঃ ঢালু হইয়া মধ্যভাগে খুলনা জেলা এবং ২৪ পরগণার দক্ষিণ-পূর্বাংশে নিম্ন জলাভূমিতে পরিণত হইয়াছে। ইছামতী বা যমুনা যশোহর জেলা হইতে খুলনা জেলায় প্রবেশ করিয়া কতকদূর ২৪ পরগণা ও খুলনা জেলার সীমা নিদিষ্ট করে ; তাহার পর যমুনার শাখা কালিন্দী এই সীমা রক্ষা করিয়া রায়মঙ্গলের সহিত মিলিত হয়। রায়মঙ্গল দক্ষিণে সমুদ্রে মিলিবার পূর্ব হইতে বিশালরূপ ধারণ করিয়া সমুদ্রের শাখা বা বাহু রূপেই দৃষ্ট হয়। রায়মঙ্গলের পূর্বদিকে পর পর মালঞ্চ, বড়পাঙ্গ, মর্জাত, বাংড ও হরিণঘাটাও এইরূপ সমুদ্র-বাহু রূপে যেন ডাঙ্গার মধ্যে চলিয়া গিয়াছে। ভাগীরথী এবং রায়মঙ্গল, কালিন্দী— যমুনার মধ্যস্থ ২৪ পরগণা জেলার মুন্দরবনে চাষ আবাদের জন্য উচ্চ বাধ দিয়া লোনা জল বাহিরে রাখিতে হয়। এখানে আবাদের মধ্যে ছোট ছোট অনেক গ্রাম গড়িয়া উঠিয়াছে। রায়মঙ্গল—কালিন্দী-যমুনা এবং হরিণঘাটা বলেশ্বর—মধুমতীর মধ্যস্থ খুলনা জেলার অন্তর্গত সুন্দরবনের নিম্নভূমিতে মানুষের বসতি অল্প এবং চাষ আবাদের জন্য নীচু নীচু বাধ দেওয়া হয় ; এ অঞ্চলের চাষীরা খুব কমই আবাদের মধ্যে বাস করে। হরিণঘাটা—বলেশ্বর—মধুমতী এবং মেঘনার মধ্যস্থ বাখরগঞ্জ জেলার সুন্দরবনের উচ্চ ভূমিতে চাষের জন্ত কোনও বাধ দিতে হয় না এবং আবাদে নানাস্থানে লোকের বসতি আছে। গঙ্গা এবং তাহার শাখা প্রশাখাগুলি বহু বৎসর হইতে নিম্নবঙ্গ তথা সুন্দর বনের পশ্চিম অংশ ত্যাগ করিয়া এখন পূর্বাংশেই তাহাদের মিষ্ট জলধারা বিতরণ করিতেছে ; এই জন্য বলেশ্বর বা হরিণঘাটা এবং পূর্বদিকে বাখরগঞ্জ–সুন্দরবনের অন্যান্ত নদীগুলির জল বঙ্গোপসাগরের বেশ নিকট পর্য্যস্ত প্রায় সারা বৎসর মিষ্ট থাকে। মধ্যভাগে খুলনা-সুন্দরবনের নদীগুলির জল ক্রমেই লোনা হইয়া ২৪ পরগণা সুন্দরবনের জ্বল অত্যন্ত লবণাক্ত হইয়াছে। সুন্দরবনের অসংখ্য খাল, নালা ও নদীর জলপথ কলিকাতা ও পূর্ববঙ্গের মধ্যে যাতায়াতের প্রধান উপায়। সব নদী নালাতেই জোয়ার ভাটা খেলিয়া থাকে এবং জোয়ার ও ভাটার সাহায্য লইয়া নৌকাগুলিকে চলিতে হয় । বর্ষাকালে প্রধান প্রধান নদী নালাগুলিতে দুইটি বিপরীত মুখী স্রোত বহিতে দেখা যায়। উত্তর হইতে দক্ষিণে বর্ষার জলের স্রোত এবং দক্ষিণ হইতে উত্তরে সমুদ্রের স্রোত বিপরীতদিকে বহিতে থাকে। দক্ষ সস্তরণকারীরাও এই স্রোত বিপৰ্য্যয়ে বিপন্ন হইয়া থাকেন। নদীর নীচের জল