পাতা:বাংলায় ভ্রমণ -প্রথম খণ্ড.pdf/২০৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পুর্ববঙ্গ রেলপথে বাংলাদেশ - 1:్స\రి একদিকে এবং উপরের জল অপরদিকে বহিতে থাকায় কেহ ডুবিয়া গেলে আর উপরে উঠতে পারে না। সুন্দরবনের নিম্নভূমি জোয়ারের জলে প্লাবিত হইয়া যায়। এই অঞ্চল উত্তরের নদী সমূহের জলধারায় আনীত পলি মাটির সাহায্যে অপেক্ষাকৃত আধুনিকযুগে গঠিত হইয়াছে এবং এই গঠন ক্রিয়া আজও চলিতেছে। সুন্দরবনের অরণ্য মধ্যে সুন্দরী গাছের সংখ্যা অত্যন্ত অধিক থাকায় ইহার নাম সুন্দরবন হইয়াছে । এক এক স্থানে এই অরণ্য এরূপ তুর্ভেদ্য যে দিনের বেলায়ও তাহার মধ্যে দৃষ্টি চলে না। সুন্দরী গাছের আকার দীর্ঘ, ইহার কাঠ লালবর্ণ ও খুব শক্ত ; এই গাছের পাতা খুব ছোট, উহার উপরিভাগ মন্থণ ও নিম্নভাগ ধূসর বর্ণ। সুন্দরী গাছ ছাড়া এই বনে পশুর, বাইন, ধোন্দল, কেওড়া, গরাণ, গেয়ো, গর্জন, হেস্তাল, বল, বনঝাউ ও গাবগাছ প্রভৃতি নানারূপ বৃক্ষ জম্মিয়া থাকে। ইহা ছাড়া প্রচুর পরিমাণে গোলপাতা ও হোগলা জন্মে। কাহারও কাহারও মতে সুন্দর বনের নাম সুন্দরী গাছ হইতে হয় নাই। কারণ অরণ্যের পূর্বাঞ্চলে সুন্দরী গাছ বড় দৃষ্ট হয় না ; তাহদের মতে সমুদ্র তীরবর্তী বলিয়া সমুদ্র-বন বা সমুন্দর-বন হইতে সুন্দরবন নাম হইয়াছে । সুন্দরবনের অরণ্যে নানাপ্রকার হিংস্র প্রাণী বাস করে। উহাদের মধ্যে “রয়াল বেঙ্গল টাইগার” বা সুন্দর বনের “কেঁদো” বা বাঘের নাম সৰ্ব্বাগ্রে উল্লেখযোগ্য। ইহাদের ন্যায় হিংস্র জন্তু পুথিবীর আর কোথাও নাই। ইহার এত শক্তিশালী যে বড় বড় গরু বা মহিষকে পিঠের উপর ফেলিয়া অবলীলাক্রমে বড় বড় খাল, নালা লাফ দিয়া পার হইয়া ছুটিতে পারে। ইহাদের উচ্চতা ৩ হইতে ৪ ফুট ও লাঙ্গলসমেত দৈর্ঘ্য ১০ হইতে ১২ ফুট । ইহাদের গাত্র হরিদ্রাবণ, উহার উপর লম্বা লম্বা কালো ডোরা থাকে। সুন্দরবনের বাঘ শিকারের ন্যায় দুঃসাহসিক ও বিপজ্জনক কাৰ্য্য অতি অল্পই আছে। সুন্দরবনে প্রতি বৎসর বহুলোকে বাঘের হাতে প্রাণ হারায়। নৌকার মাঝি বা দাড়ীর্কে বাঘে মারিয়া ফেলিলে সেই স্থানেই তাহার হাল বা দাড় উপরদিক করিয়া পুতিয়া একখণ্ড শাদা কাপড়ের নিশান তাহাতে বাধিয়া দেওয়া হয়; নিশানের এক কোণে এক মুঠ চাউল বাধিয়া রাখা হয়। সুন্দরবনের সর্বত্র নদী-নালার ধারে এই আড়ম্বরহীন স্মারক চিহ্নগুলি দেখিতে পাওয়া যায়। বাঘের পরই সুন্দরবনের নরখাদক কুমীরের নাম করা যাইতে পারে। ডাঙ্গায় যেরূপ বাঘের উৎপাত, জলে কুমীরের অত্যাচারও ঠিক সেইরূপ। ইহারা নদী নালা সৰ্ব্বত্র অবস্থান করে এবং সুযোগ পাইলেই মানুষ ও গরু ধরিয়া লইয়া যায়। সুন্দরবনে অসংখ্য বানর ও বন্য বরাহ বাস করে। বন্য বরাহগুলি চার পাচ ফুট লম্বা ও প্রায় দুই তিন ফুট উচ্চ হয়। ইহাদের গায়ের রং কালো ও ফিকে লালে মিশানো এবং ঘাড় ও পেটের লোমগুলির গোড়ার দিক কালো ও আগার দিক সাদা। সুন্দরবনে বন্য মহিষ দেখিতে পাওয়া যায়, ইহারা অত্যন্ত হিংস্র । চলিত কথায় হৈাদিগকে “বয়ার” বলে । হরিণ শিকারের জন্য অনেকেই সুন্দরবনে যাইয় থাকেন। এখানে নানাজাতীয় হরিণের বাস, তন্মধ্যে ডোরা বা চিতা হরিণ ও কুকুরে হরিণের সংখ্যাই অধিক। কুকুরে হরিণগুলি দেখিতে বড় ছাগলের মত ; ইহাদের গায়ের রং লাল। সুন্দরবনে বড় বড় অজগর ও বহু জাতীয় সাপ আছে। এক একটি অজগর 13