পাতা:বাংলায় ভ্রমণ -প্রথম খণ্ড.pdf/২০৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

S8 বাংলায় ভ্রমণ এত বড় যে তাহারা মানুষ বা হরিণকে অক্লেশে গিলিয়া ফেলিতে পারে। সুন্দরবনে বিষধর সর্পের সংখ্যা খুব বেশী। কেউট, গোখুৱা, পাতরাজ, দুধরাজ, মণিরাজ, ধনীরাজ, ভীমরাজ, শঙ্খচূড়, মণিচূড়, নাগরচাদ, কানড়, শাখামুঠি প্রভৃতি অসংখ্য শ্রেণীর সর্প সুন্দরবনের অধিবাসী। পূৰ্ব্বে সুন্দরবনের স্থানে স্থানে গণ্ডার দেখিতে পাওয়া যাইত। বর্তমানে উহার একরূপ নিঃশেষ হইয়া গিয়াছে বলিলেই হয়। সুন্দরবনে মধু মক্ষিকার সংখ্যাও অপৰ্য্যাপ্ত। প্রতি বৎসর এই অঞ্চল হইতে বহু সহস্র টাকার মধু ও মোম সংগৃহীত হয়। মুন্দরবনবাসী পক্ষীর মধ্যে কুলা আকৃতিতে সৰ্ব্বাপেক্ষা বড় । ইহার সাদা ও কালো এষ্ট তুই শ্রেণীতে বিভক্ত | চিল, বক ও কঙ্ক বা কাকও সুন্দরবনে দৃষ্ট হয়। সুন্দরবনবাসী কাকের সহিত নিত্যদৃষ্ট কাকের কোন সম্বন্ধ বা সাদৃশু | বাঘ ও কুমীরের হাত হইতে রক্ষা পাইবার বিশ্বাসে কাঠুরিয়া বা মাঝিরা মুন্দরবনে যাইবার সময়ে গাজী মোবারক আলি বা মোরা গাজীর (ঘুটিয়ারী শরীফ দ্রষ্টব্য) চেল বা বংশীয় বলিয়া পরিচিত ফকিরদিগের সাহায্য গ্রহণ করেন । ইহারা মন্ত্রবলে বাঘ, কুমীর প্রভৃতির আক্রমণ প্রতিহত করিতে পারেন বলিয়া লোকের বিশ্বাস । ইহা অবশ্ব স্বীকাৰ্য্য যে এই বিশ্বাসের জোরে তাহারা তুর্গম ও বিপদসঙ্কুল জঙ্গলমধ্যে যাইয়া কাজ করিবার সাহস ও বল পান। কাঠুরিয়ারা জঙ্গলে কাঠ কাটিবার সময়ে ফকিরকে সঙ্গে করিয়া লইয়া যান। ফকির একটুখানি জঙ্গল পরিষ্কার করিয়া মন্ত্র পড়িতে পড়িতে একটি বৃত্ত আঁকেন এবং ইহার মধ্যে লতা-পাত দিয়া পাশাপাশি ছোট ছোট সাতটি ঘর তৈয়ারী করেন। ডানদিক দিয়া আরম্ভ করিয়া প্রথম তিনটি ঘর যথাক্রমে জগবন্ধু, মহাদেব ও মনসাকে উৎসর্গ করা হয়। ইহার পর জঙ্গলের উপদেবী রূপাপরার জন্য একটি বেদী তৈয়ারী হয়। ইহার পরে চতুর্থ ঘরটিকে দুভাগ করিয়া যথাক্রমে কালী এবং তাহার কন্যা কালীমায়াকে উৎসর্গ করা হয় । ইহার পর জঙ্গলের অপর উপদেবী ওড়পরীর জন্য একটি বেদী থাকে। পঞ্চম ঘরটিকে ছভাগ করিয়া কামেশ্বরী ও বুড়ী ঠাকুরাণীকে উৎসর্গ করা হয়। তৎপরে রক্ষাচণ্ডী নামে সিন্দুরলিপ্ত একটি গাছের গুড়ি থাকে। তাহার পর ষষ্ঠ ঘরটি তুভাগ করিয়া গাজী সাহেব এবং র্তাহার ভ্রাত কালুকে এবং পার্শ্ববৰ্ত্তী সপ্তম ঘরটিকে ভূভাগ করিয়া গাজী সাহেবের পুত্র এবং ভ্রাতুপুত্র চাওয়াল পীর ও রাম গাজীকে উৎসর্গ করা হয়। ইহার পর বাস্তুদেবতার পূজার জন্য কলাপাত৷ রাখা হয়। ঘটে সিন্দুর দিয়া দেবতাদের ছবি আঁকিয়া সম্মুখে রাখা হয় এবং ঘরগুলির উপরে নিশান বুলাইয়া চাউল, কলা, নারিকেল, চিনি, মিঠাই ও চিরাগের নৈবেদ্য দিয়া পূজা করা হয়। স্নানান্তে কাঠুরিয়ার দেওয়া একটি ধুতি পরিয়া বাহুতে, হস্তে ও কপালে সিন্দুর মাখিয়া ফকির পূজা করেন। সর্বশেষে বাঘ তাড়াইবার মন্ত্র বলেন। যদি জানা যায় নিকটে কোন বাঘ আছে, বা যদি বাঘের গর্জন শোনা যায় তাহা হইলে বিশেষপ্রকার মন্ত্র পড়িতে হয়। জঙ্গলে প্রবেশ করিতে হইলে লোকে প্রথমে গাজী সাহেবের নাম লইয়া থাকে। সুন্দরবন পুরাকালে সমতট বা বগড় (বা ব্যাস্ত্রতট) রাজ্যের অন্তর্গত ছিল। যুয়ান চোয়াং নামক প্রসিদ্ধ চৈনিক পরিব্রাজক সমুদ্রকুলবর্তী সমতট রাজ্যে বহু দিগম্বর জৈন, ৩০ টি বৌদ্ধ বিহার ও সঙ্ঘারাম এবং এক শত হিন্দু মন্দির দেখিয়াছিলেন। এই 13a *