পাতা:বাংলায় ভ্রমণ -প্রথম খণ্ড.pdf/২১১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পূর্ববঙ্গ রেলপথে বাংলাদেশ ఫిసె বারাসাত হইতে বারাসাত-বসিরহাট লাইটু রেলওয়েযোগে বসিরহাট ও হাসনাবাদ ও ভূতি স্থানে যাওয়া যায়। মসলন্দপুর-কলিকাতা হইতে ৩৪ মাইল দূর। এই স্থান হইতে ৮ মাইল দূরবর্তী চব্বিশ পরগণা জেলার অন্যতম বাণিজ্য-প্রধান স্থান বাড়ড়িয়ায় যাওয়া যায়। মসলন্দপুর হইতে বাতুড়িয়া পৰ্য্যন্ত পাকা রাস্তা আছে ও মোটরবাস যাতায়াত করে। কলিকাতা হইতে বারাসাত বসিরহাট লাইট রেলওয়ে যোগে আড়বালিয়া বা গোপমহল স্টেশন হইতেও বাতুড়িয়া যাওয়া যায় ; উভয় স্টেশন হইতেই বাছড়িয়া প্রায় ৪ মাইল দর। মসলন্দপুর স্টেশন হইতে বাহুড়িয়ার পথে প্রায় ছয় মাইল দূরে হায়দরপুর গ্রাম তিতুমীরের জন্মস্থান। ১৭৮২ খৃষ্টাব্দে তিতুমীরের জন্ম হয়। বাল্যকাল হইতেই তিতু অত্যন্ত শক্তিশালী ছিলেন। প্রথম যৌবনে তিনি কিছুকাল কলিকাতায় পালোয়ানি করেন ; পরে নদীয়া জেলার কয়েকজন জমিদারের বৃত্তিভোগী লাঠিয়াল ছিলেন । এই সময়ে একটি দাঙ্গায় লিপ্ত হইয়া তিনি কারাদণ্ডে দণ্ডিত হন। অতঃপর ৩৯ বৎসর বয়সে তিনি হজ করিবার জন্য মক্কায় গমন করেন ও সেখানে ওয়াহাবি ধৰ্ম্মের প্রচারক সৈয়দ আহম্মদের শিষ্য হন। ১৮২৯ খৃষ্টাব্দে দেশে প্রত্যাগমন করিবার পর তিনি ওয়াহাবি মত প্রচার করিতে আরম্ভ করেন এবং অচিরকাল মধ্যে বহু মুসলমান তাহার অনুগামী হন। এই সময়ে মিস্কিন শাহ নামক জনৈক ফকির তাহার সহিত যোগদান করেন। র্যাহারা তিতুমীরের প্রচারিত নবধৰ্ম্ম মত মানিত না, সেই সকল মুসলমান এবং হিন্দুর উপর তাহার অনুচরেরা অত্যাচার ও উৎপীড়ন করিতে আরম্ভ করে। এই সময়ে পুড়ার জমিদার কৃষ্ণদেব রায় ও গোবরডাঙ্গার জমিদার কালীপ্রসন্ন মুখোপাধ্যায়ের সহিত তিতুর সংঘর্ষ উপস্থিত হয়। তিতুর বহু লোকবল থাকায় এবং তাহাদের অত্যাচার অত্যধিক বৃদ্ধি পাওয়ায় বারাসাতের ম্যাজিস্টেট আলেকজাণ্ডার সাহেব কতকগুলি সৈন্য লইয়া জমিদারদ্বয়ের সাহায্যের জন্য অগ্রসর হন ; কিন্তু তিতুর সহিত যুদ্ধে তাহাদের সমবেত শক্তির পরাজয় ঘটে। জয়স্ফীত তিতু নিজেকে বাদশাহ বলিয়া ঘোষণা করেন এবং হায়দরপুরের অনতিদূরবর্তী নারিকেলবেড়িয়া নামক গ্রামে এক বাঁশের কেল্লা নিৰ্ম্মাণ করিয়া তথায় ঢাল, তরোয়াল, লাঠি, বর্শা, বন্দুক প্রভৃতি সংগ্রহ করতে থাকেন। তিতুর অত্যাচার দমনের জন্য মোল্লাহাটি নীলকুঠির ডেভিস্ সাহেব লোকজন লইয়া তিতুমীরের দলকে আক্রমণ করেন, কিন্তু তিনিও পরাজিত হন। গোবরা-গোবিন্দপুরের ভূস্বামী দেবনাথ রায় তিতুমীরের অত্যাচারে উৎপীড়িত বহু ব্যক্তিকে আশ্রয় দেন এবং স্বয়ং তিতুর সেনাদলের সহিত বীরবিক্রমে যুদ্ধ করিয়া অবশেষে গুরুতর আঘাতের ফলে মৃত্যুমুখে পতিত হন। এই সব কারণে তিতুমীরের সাহস অত্যন্ত বাড়িয়া যায় এবং একে একে বহু গ্রামের উপর তাহার আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হয়। এই সকল অত্যাচার ও অরাজকতার কথা লর্ড বেন্টিঙ্কের কর্ণগোচর হইলে তাহার হুকুমে দুইটি কামান, একশত গোরা ও তিনশত সিপাহী একজন কৰ্ণেলের পরিচালনায় তিতুমীরের বিরুদ্ধে প্রেরিত হয়। কর্ণেল সাহেবের লোকজনের উপর তিতুমীরের দলবল অলক্ষিতে ইষ্টক প্রস্তরাদি নিক্ষেপ করিতে আরম্ভ করে । তথাপি অকারণ লোকক্ষয় নিবারণের জন্ত কর্ণেল সাহেব স্বয়ং বাশের কেল্লার স মুখে উপস্থিত হইয়া গ্রেপ্তারি পরওয়ানা দেখাইয়া তিতুকে আত্মসমর্পণ করিতে বলেন। বার অনুরোধ সত্ত্বেও যখন কোন ফল হইল না, তখন কর্ণেল সাহেবের হুকুমে