পাতা:বাংলায় ভ্রমণ -প্রথম খণ্ড.pdf/২১২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বাংলায় ভ্রমণ কামানের ফাক আওয়াজ করা হইল। ফাক আওয়াজে কাহারও কোন অনিষ্ট ৯ হওয়ায় তিতুর লোকজনের সাহস বাড়িয়া গেল। তিতুর সহকারী মিস্কিন ফকির সগবেঃ হাসিয়া বলিলেন, “গোল খাডাল” অর্থাৎ কামানের গোলা আমি খাইয়া ফেলিয়াছি। তিতুর অজ্ঞ অনুচরগণ র্তাহার অলৌকিক শক্তি আছে মনে করিয়া আরও উৎসাহিত হইয়া সরকারী ফৌজের উপর ইট পাথর প্রভৃতি ছুড়িতে লাগিল, তখন কর্ণেল সাহেব গোলা-ভরা কামান দাগিবার হুকুম দিলেন। মূহুর্তের মধ্যে গোলার আঘাতে বাশের কেল্লা ভূমিসাৎ হইল এবং তিতুর বহু অনুচর হত ও আহত হইল। স্বয়ং তিতুমীরও এই যুদ্ধে নিহত হইলেন। তাহার সেনাপতি মামুমের সহিত ৩৫০ জন লোক বন্দী হইল। ইহাদের মধ্যে প্রায় ১৪০ জন লোকের কারাদণ্ড হয় এবং তিতুর সেনাপতি মাসুমকে বাঁশের কেল্লার সম্মুখে ফাঁসি দেওয়া হইয়াছিল। যুদ্ধ শেষ হইবার পূর্বেই মিস্কিন ফকির কোথায় অন্তহিত হইয়াছিলেন। পরে বহু অনুসন্ধান করিয়াও র্তাহার আর খোজ পাওয়া যায় নাই । গোবরডাঙ্গা–কলিকাতা হইতে ৩৬ মাইল দূর। এই গ্রামটি অধুনা শীর্ণকায় যমুনা নদীর তীরে অবস্থিত। ইহা প্রাচীন কুশদ্বীপ বা কুশদহের অন্তর্গত। এখানে মুখোপাধ্যায় উপাধিধারী এক ঘর প্রাচীন জমিদার বংশের বাস। ইহা একটি বদ্ধিষ্ণু গ্রাম। এখানে মিউনিসিপ্যালিটি আছে। আনন্দময়ী বাটী নামক দেবালয় এখানকার একটি দ্রষ্টব্য বস্তু। প্রতি বৎসর ১লা বৈশাখ তারিখে গোবরডাঙ্গর জমিদার বাটতে গোষ্ঠবিহার নামে একটি মেলা হয় এবং উহা দেখিবার জন্য নানাস্থান হইতে বহু লোকের সমাগম হয়। একটি খোয়াড়ের মধ্যে একটি গাভী ও একটি শূকর শাবককে ছাড়িয়া দেওয়া হয়। গাভী ও শূকর শাবকটি পরস্পরের ভয়ে ছুটাছুটি করিতে থাকে। গাভী কর্তৃক শূকর শাবককে দংশন না করা পর্য্যন্ত এই ক্রীড়া চলিতে থাকে। গোবরডাঙ্গর নিকটবৰ্ত্তী ইছাপুর গ্রামে হড় চৌধুরীদের একটি প্রাচীন ও বৃহৎ নবরত্ন মন্দির ও জোড়-বাংলা আছে। গোবরডাঙ্গার নিকটস্থ রেলওয়ে সেতুর দক্ষিণে যমুনার উপর প্রতাপপুর নামক স্থান প্রতাপাদিত্যের স্মৃতি বহন করিতেছে। কথিত আছে, ইছাপুরের হুড় চৌধুরী বংশীয় প্রসিদ্ধ পণ্ডিত রাঘব সিদ্ধান্তবাগীশের উপর কোনও কারণে ক্রুদ্ধ হইয়। প্রতাপাদিত্য সসৈন্তে আসিয়া যমুনার ধারে ছাউনী করেন। সিদ্ধাস্তবাগীশ মহাশয় নাকি দৈববলে প্রতাপাদিত্যের ছাউনীতে প্রবেশ করিয়া নিজ হাতে রাজার পূজার ব্যবস্থা করিয়া রাখেন। প্রতাপ প্রীত হইয়া যখন প্রশ্ন করেন কে এই সকল বন্দোবস্ত করিয়াছে, তখন পণ্ডিত মহাশয় আত্ম পরিচয় দেন। তখন র্তাহদের মিটমাট হইয়া যায়। সিদ্ধান্তবাগীশ মহাশয় তখন রাজাকে আহারাদি করিতে অনুরোধ করিলে তিনি বলেন যে পররাজ্যে তিনি অন্ন গ্রহণ করেন না। পণ্ডিত মহাশয় তখনই দলিল করিয়া প্রতাপাদিত্যকে ছাউনীর স্থানটি প্রদান করিয়া আতিথ্যে আপ্যায়িত করেন। তখন হইতে স্থানটি প্রতাপপুর নামে খ্যাত হয়। সিদ্ধাস্তবাগীশ মহাশয়ের পৌত্র রঘুনাথের সময় ইছাপুরের নবরত্ন মন্দির প্রতিষ্ঠিত হয়। গ্রাম্য কাহিনী ༔ ཟླ་བ་ཡིན་ལ་ শ্ৰীকৃষ্ণের সহিত যুক্ত করিয়াছে, এই স্থানেই নাকি শ্ৰীকৃষ্ণ র্তাহার ধেষ্ট চরাহতেন ।