পাতা:বাংলায় ভ্রমণ -প্রথম খণ্ড.pdf/২১৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পূর্ববঙ্গ রেলপথে বাংলাদেশ ミ・> গোবরডাঙ্গ রেল স্টেশন হইতে তিন মাইল দূরবর্তী গৈপুর গ্রামে ওলাবিবির দরগা নামে এক দেবস্থান আছে। ইহা হিন্দু ও মুসলমান উভয় সম্প্রদায় কর্তৃক সম্মানিত। প্রতি বৎসর ফাঙ্কন মাসের সংক্রান্তিতে এখানে পূজা ও তিন দিনব্যাপী মেলা হয়। গৈপুর গোপিনীদের বাড়ী ছিল বলিয়া কথিত ; নদীর অপরপারে গোপিনীপোতা এবং পাশ্বস্থ একটি গ্রামের নাম কানাই নাটশাল হইতে গ্রাম্য কাহিনীর সম্পূর্ণতার পরিচয় পাওয়া যায় ! গোবরডাঙ্গার দক্ষিণদিকস্থ চারঘাট নামক স্থানে যমুনাগর্ভে “ হরে শুড়ীর দহ ” ও নদী তীরে পীর ঠাকুরবরের আস্তানা আছে। পীর ঠাকুরবর প্রথমে হিন্দু ছিলেন, পরে মুসলমান হন। (লাউজানি দ্রষ্টব্য।) তিনি চিরকুমার ছিলেন এবং হিন্দু সন্ন্যাসীর মত গোপনে সাধন ভজন করিতেন ; সেই জন্য র্তাহার নাম হইয়াছিল পীর ঠাকুরবর। র্তাহার সমাধিস্থানে প্রত্যহ সকালে মুসলমান সেবায়েৎ ফুল ও বেলপাতার অর্ঘ্য প্রদান করেন । কথিত আছে হরেকৃষ্ণ সাহা বা “হরে শুড়ী” নামক এক ব্যক্তি র্তাহার কৃপালাভ করিয়া ব্যবসায়ে প্রভূত অর্থ উপার্জন করেন ; কিন্তু পরে গৰ্ব্বিত হইয়া পীর সাহেবকে অশ্রদ্ধা করেন। র্তাহার অভিশাপে হরে কৃষ্ণ সাহা নৌকা সমেত যমুনা গর্ভে নিমজ্জিত হওয়ায় তদবধি উক্ত স্থান “ হরে শুড়ীর দহ ” নামে পরিচিত হয়। গোবরডাঙ্গার চার মাইল পূর্বে দেয়াড় নামক স্থানে যমুনা ও ইছামতীর সঙ্গমস্থলে প্রতি বৎসর মাঘী পূর্ণিমার সময় এক বিরাট মেলা বসে এবং গঙ্গা ও যমুনার প্রতিমূৰ্ত্তির পূজা হয়। এই মেলায় প্রায় ১•১৫ হাজার যাত্রী যোগদান করে। লোকের বিশ্বাস যে মাঘী পূর্ণিমার দিন এই স্থানে গঙ্গা ও যমুনার মিলন হয় এবং এই স্থানে ঐদিন স্নান করিলে গঙ্গা ও যমুনা এই দুই পুণ্যতোয় নদীতে স্নানের ফল লাভ করা যায়। গোবরডাঙ্গ হইতে প্রায় ছয় মাইল পশ্চিমে যমুনা নদীর তীরে জলেশ্বর নামক স্থানে চৈত্র সংক্রান্তিতে এক বিরাট মেলা হয় এবং উহাতেও প্রায় ১০১২ হাজার যাত্রী যোগদান করে। এই মেলা বুড়া শিবের মেলা নামে পরিচিত। এখানে একটি বৃহৎ দীঘি আছে। প্রবাদ যে প্রতি বৎসর চৈত্র সংক্রান্তির অব্যবহিত পূর্বে এই দীঘি হইতে একটি প্রকাগু চড়ক গাছ ও একখণ্ড প্রস্তর আপনা হইতেই ভাসিয়া উঠে এবং পূজা ও মেলা শেষ হইবার পর আবার দীঘির জলে নিমজ্জিত হইয়া যায়। গোবরডাঙ্গার দুই স্টেশন পূর্ববর্তী হাবড় নামক স্টেশন হইতেও গরুর গাড়ীতে করিয়া জলেশ্বরে যাওয়া যায় । বনগ্রাম জংশন—কলিকাতা হইতে ৪৮ মাইল দূর। ইহা যশোহর জেলার একটি মহকুমা। বনগ্রাম শহরটি ইছামতী নদীর তীরে অবস্থিত। ইহা একটি বিখ্যাত বাণিজ্য কেন্দ্র। এখানে ইছামতী নদীর উপর একটি ভাসমান সেতু আছে। ইছামতী নদীর উপরকার রেলওয়ে সেতুর অতি নিকটে একটি প্রাচীন অশ্বখ বৃক্ষ আছে। প্রবাদ পূর্বে এই অশ্বথতলায় “ডাকাতে কালী” নামে এক কালী প্রতিষ্ঠিত