२०९ বাংলায় ভ্রমণ ছিলেন। ডাকাতেরা নাকি ডাকাতি করিতে যাইবার পূর্বে এই কালীর পূজা করিয়া বাহির হইত এবং সুযোগ পাইলে এখানে নরবলি দিত। বনগ্রাম জংশন হইতে একটি শাখা লাইন রাণাঘাট পৰ্য্যন্ত গিয়াছে। বেনাপোল--কলিকাতা হইতে ৫৩ মাইল দূর। স্টেশন হইতে মাত্র অদ্ধ মাইল দূরে “যশোর রোড” নামক প্রশস্ত রাজবত্বের পাশ্বে বৈষ্ণব সাহিত্যে সুপ্রসিদ্ধ “যবন হরিদাস” বা হরিদাস ঠাকুরের সাধনপীঠ ও তুলসী মঞ্চ অবস্থিত। এখানে একটি মন্দির মধ্যে নিতাই, গৌর ও হরিদাস ঠাকুরের দারুময়ী মূৰ্ত্তি আছে। মন্দিরের সম্মুখেই তুলসীমঞ্চ অবস্থিত। দোলযাত্রার সময় এখানে মহোৎসব হয় ও তদুপলক্ষে প্রায় চার পাচ হাজার নরনারীর সমাগম হইয়া থাকে। হরিদাস ঠাকুরের তুলসীমঞ্চ, বেনাপোল জয়ানন্দের “চৈতন্য মঙ্গল” গ্রন্থ হইতে জানা যায় যে বুঢ়ন পরগণার অন্তর্গত স্বর্ণ নদীর তীরবর্তী ভাটকলাগাছি নামক গ্রামে এক ব্রাহ্মণ পরিবারে হরিদাস ঠাকুরের জন্ম হয়। অনেকের অনুমান যে খুলনা জেলার সাতক্ষীরা মহকুমার অন্তর্গত কলাগাছি বা “কেঁড়াগাছি” নামক গ্রামই হরিদাস ঠাকুরের জন্মস্থান ভাটকলাগাছি গ্রাম। কোন এক বিপ্লবের ফলে অতি শিশুকালেই হরিদাস পিতামাতাকে তারাইয়া স্থানীয় কাজীর গুহে লালিত পালিত হন। বাল্যকাল হইতেই তাহার মনে বৈরাগ্যের সঞ্চার হয় এবং তিনি পালক পিতার গৃহত্যাগ করিয়া বৈষ্ণব ধৰ্ম্ম অবলম্বন করেন। লোকে তাহাকে মুসলমান বলিয়াই জানিত। চৈতন্য ভাগবত, চৈতন্যচরিতামৃত প্রভৃতি শ্রেষ্ঠ বৈষ্ণব গ্রন্থ পাঠে অনুমিত হয় যে হরিদাস মুসলমান বংশেই জন্মগ্রহণ করিয়াছিলেন। গৃহত্যাগ করিবার পর তিনি বেনাপোলের এক জঙ্গল মধ্যে কুটীর নিৰ্ম্মাণ করিয়া তথায় এক তুলসী মঞ্চের প্রতিষ্ঠা করেন ও “রাত্রি দিন তিন লক্ষ নাম সংকীৰ্ত্তন” করিতে থাকেন। র্তাহার এইরূপ অপূৰ্ব্ব সাধনার পরিচয় পাইয়া স্থানীয় লোকজন তাহার প্রতি বিশেষ অনুরক্ত হইয়া পড়েন। ইহাতে স্থানীয় ব্রাহ্মণ জমিদার রামচন্দ্র খানের মনে বিশেষ ঈর্ষার সঞ্চার হয় । হরিদাসকে সাধনপথ হইতে ভ্ৰষ্ট করিবার জন্য তিনি নানারূপ অপচেষ্টা করেন।