পাতা:বাংলায় ভ্রমণ -প্রথম খণ্ড.pdf/২২৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পূৰ্ব্ববঙ্গ রেলপথে বাংলাদেশ × ა ტ ছল। সমতটে বৌদ্ধ প্রভাবের বিবরণ প্রাচীন পৰ্য্যটকগণের ভ্রমণ-কাহিনীতে লিপিবদ্ধ আছে। সুতরাং এই সকল অঞ্চলে তৎকালে বৌদ্ধ বিহার ও সংঘারাম থাকা সম্পূর্ণ সম্ভব বলিয়াই ঐতিহাসিকগণ অনুমান করেন। খুলনা-কলিকাতা হইতে ১০৯ মাইল দূর। ইহা ভৈরব নদ ও রূপসা নদীর সঙ্গমস্থলে অবস্থিত এবং মধ্য-বঙ্গের একটি প্রধান গঞ্জ ও বন্দর। নদীর তীর দিয়া খুলনা শহরের দৃশ্ব অতি সুন্দর। খুলনা শহরে আধুনিক নাগরিক জীবনের প্রায় সকল প্রকার সুখ সুবিধাই বৰ্ত্তমান আছে। এই শহরের জনসংখ্যা ক্রমশঃ বৃদ্ধি পাইতেছে। এখানে ছেলেদের জন্ত তিনটি এবং মেয়েদের জন্য একটি উচ্চ ইংরেজী বিদ্যালয় আছে। খুলনা শহরে প্রতি সপ্তাহের শনি ও বুধবারে প্রকাণ্ড হাট বসে। উহা “সাহেবের হাট” নামে পরিচিত। বহু বৎসর পূৰ্ব্বে নীলকর শ্বালেট সাহেব এই হাটের স্মৃষ্টি করেন। বর্তমান খুলনা শহর হইতে প্রায় দেড় মাইল উত্তর-পূর্বদিকে ভৈরব নদের দক্ষিণ তীরে রেণীগঞ্জ নামক স্থানে পুরাতন খুলনা অবস্থিত ছিল। পূৰ্ব্বে ইহার নাম ছিল নয়াবাদ ৷ স্থানীয় নীলকর রেণী সাহেবের অত্যাচার নিবারণের জন্য ইংরেজ সরকার এখানে ১৮৪২ খৃষ্টাব্দে একটি মহকুমা সৃষ্টি করিতে বাধ্য হয়েন। বাংলাদেশের মধ্যে ইহাই সৰ্ব্বপ্রথম মহকুমা। ১৮৮২ খৃষ্টাব্দে খুলনা স্বতন্ত্র জেলায় পরিণত হয়। এখানে রেণী সাহেবের একটি কুঠি এখনও বর্তমান আছে, উহার প্রাঙ্গনে রেণীর এক পুত্রের সমাধি আছে। স্থানীয় লোকেদের সমবেত চেষ্টার ফলে অবশেষে অত্যাচারী রেণী সাহেবের পতন ঘটে । - “খুলনা” নামের উৎপত্তি সম্বন্ধে জনশ্রুতি যে প্রসিদ্ধ চণ্ডীকাব্যের নায়ক ধনপতি সদাগরের পত্নী খুল্লনার নাম হইতেই এই স্থানের নাম খুলনা হইয়াছে। বর্তমান রেণীগঞ্জের সামান্য উত্তরে তালিবপুর গ্রামে ধনপতি সদাগরের প্রতিষ্ঠিত বলিয়া কথিত “খুল্লনেশ্বরী" কালী আজিও পূজিত হইতেছেন। জ্যেষ্ঠ পত্নী লহনার নামানুসারেও ধনপতি ভৈরবের উত্তর তীরে “লহনেশ্বরী” নামে এক কালী প্রতিষ্ঠা করেন। যে স্থানে কালীর মন্দির অবস্থিত তথায় বহু উলুবন থাকার জন্য এই কালী সাধারণের নিকট "উলুবনের কালী” নামে পরিচিত। খুলনা নামের উৎপত্তি সম্বন্ধে অন্য প্রকার প্রবাদও প্রচলিত আছে। এখন যেখানে খুলনা শহর পূৰ্ব্বে তথায় গভীর জঙ্গল ছিল। প্রকৃতপক্ষে এই স্থান হইতেই সুন্দরবনের আরম্ভ ছিল। যে সকল লোক সুন্দরবনে কাষ্ঠ, গোলপাত, হোগলা অথবা মধু সংগ্ৰহ করিতে যাইত, তাহারা প্রাচীন খুলনা বা নয়াবাদের থানার নিকট নৌকা রাখিয়া রাত্রি যাপন করিত। অমুকুল স্রোত বা বায়ুর জন্য কোন মাঝি রাত্রিকালে নৌকা খুলিবার উপক্রম করিলে বন মধ্য হইতে নাকি বনদেবতা বলিয়া উঠিতেন, “খুলে না, খুলে না"। কেহ কেহ বলেন যে এই কারণেই এই স্থানের নাম “খুলোনা” বা খুলনা হয়। খুলনা শহরের বিপরীত দিকে ভৈরব নদের উত্তর পারে অবস্থিত সেনের বাজার একটি প্রাচীন স্থান। প্রবাদ, সেনবংশীয় রাজা লক্ষণ সেন এই বাজারটির প্রতিষ্ঠাতা। শাখহাটি ও সেনহাটির সহিত লক্ষণ সেনের সংশ্রবের কথা পূর্বেই উল্লিখিত হইয়াছে।