পাতা:বাংলায় ভ্রমণ -প্রথম খণ্ড.pdf/২২৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পূৰ্ব্ববঙ্গ রেলপথে বাংলাদেশ St ও মাগুর মহকুম, যশোহর জেলার তান্তর্গত রাজা সীতারাম রায়ের প্রচীন রাজধানী মহম্মদপুর এবং তাহার অনতিদূরে এই রেলপথের কালুখালি-ভাটিয়াপাড়া শাখার প্রোয়ালমারি বাজার নামক গঞ্জ, উত্তর-পূর্ব দিকে ফরিদপুর জেলার গোপালগঞ্জ ও মাদারীপুর মহকুমা এবং পূর্বদিকে বাখরগঞ্জ বা বরিশাল জেলার সদর শহর বরিশাল যাওয়া যায়। রূপসা ঈস্ট —খুলনা শহরের নিকটে রূপসা নদীর পূৰ্ব্বে তীরে অবস্থিত। এই স্থান হইতে খুলনা-বাগেরহাট লাইট রেলওয়ের আরম্ভ। খুলনাঘাট ও রূপসা ঈস্টের মধ্যে ফের ষ্টীমার যাতায়াত করে। স্টেশনের অনতিদূরে প্রসিদ্ধ নীলকর রেণী সাহেবের কুঠি অবস্থিত। - বাহিরদিয়া-কলিকাতা হইতে ১১৫ মাইল দূর। স্টেশনের নিকটে মানসার বাজার নামে একটি পুরাতন গঞ্জ আছে। এই বাজারে “বুড়ীমা” নামে এক বিখ্যাত মৃন্ময়ী কালী আছেন। ইহার মুখ পশ্চিমাভিমুখী। কথিত আছে, পূৰ্ব্বে কালী প্রতিমার মুখ দক্ষিণাভিমুখে ছিল। একদিন নিকটবৰ্ত্তী ভৈরব নদ দিয়া একদল দাড়ি “সারি” গান গাহিয়া যাইতেছিল ; উহা শুনিবার জন্য কালী প্রতিমা নাকি পশ্চিমদিকে মুখ ফিরান এবং সেই দিন হইতে তদবস্থায় রহিয়াছেন। এই কালী বিশেষ জাগ্রত বলিয়া এতদঞ্চলে প্রসিদ্ধি আছে। এখানে শনি ও মঙ্গলবারে যাত্রীর সমাগম হয়। যাত্রাপুর—কলিকাতা হইতে ১২৩ মাইল দূর। স্টেশনের নিকটে শীর্ণকায় ভৈরবনদের অপর পারে লাউপালা গ্রামে প্রসিদ্ধ বৈষ্ণব ভক্ত বালকদাস বাবাজীর সমাধি মন্দির ও তৎপ্রতিষ্ঠিত গোপালজীউর মন্দির অবস্থিত। প্রায় পৌনে দুই শত বৎসর পূর্বে বালকদাস জন্মগ্রহণ করেন। কথিত আছে, স্বপ্নে আদেশ পাইয়া তিনি ভৈরব নদের মধ্য হইতে গোপালজীউর বিগ্রহ লাভ করেন এবং ভিক্ষালব্ধ অর্থে একটি সুন্দর মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। গোপালজীউর মাহাত্ম্য সম্বন্ধে নানা রূপ কিংবদন্তী প্রচলিত আছে। সিদ্ধ মহাত্মা বালকদাস গোপাল বিগ্রহকে স্বীয় পুত্রের ন্যায় জ্ঞান করিতেন এবং গোপালের সহিত র্তাহার নাকি প্রত্যক্ষ কথাবাৰ্ত্তা চলিত। জনশ্রুতি যে একবার গোপাল বালকের বেশে বরিশাল জেলার ঝালকাঠি বন্দরে গিয়া জনৈক ময়রার সন্দেশ খাইয়া মূল্যের পরিবর্তে স্বীয় হস্তের সুবর্ণ বলয় তাহাকে দিয়া আসেন। পরদিন বিগ্রহের হস্ত শুন্য দেখিয়া বালকদাস এ সম্বন্ধে তাহাকে জিজ্ঞাসা করিলে গোপাল নাকি তাহাকে সকল বৃত্তান্ত বলেন। বালকদাস ঝালকাঠিতে গিয়া ময়রার নিকট হইতে গোপালের বলয় ছাড়াইয়া আনেন এবং ময়রা সেই দিন হইতে গোপালজীউর একজন অনুরক্ত ভক্ত হইয়া উঠেন। গোপালের সম্বন্ধে এইরূপ অনেক অদ্ভূত জনশ্রুতি আছে। প্রতি বৎসর মহাসমারোহে গোপালের রথযাত্রা উৎসব সম্পন্ন হয় এবং তদুপলক্ষে যাত্রাপুরে প্রায় পক্ষকালস্থায়ী একটি বৃহৎ মেলা হয়। এই মেলায় আনুমানিক ১৫ হাজার যাত্রীর সমাগম হয় এবং ইহাতে সুন্দর দেশীয় পুতুল প্রভৃতি লোক শিল্পের নিদর্শন দৃষ্ট হয়। রাযাত্রা হইতেই গ্রামের নাম যাত্রাপুর হইয়াছে অনেকে এইরূপ অনুমান করেন । য ত্রাপুর সুপারি ও নারিকেলের কারবারের জন্য প্রসিদ্ধ।