२२१ বাংলায় ভ্রমণ স্বনামখ্যাত প্রতাপাদিত্য রাজা বিক্রমাদিত্যের পুত্র। র্তাহার জন্ম তারিখ ও স্থান লইয়া মতভেদ আছে। অনেকের অনুমান ১৫৬০৷৬১ খৃষ্টাব্দে গৌড় নগরে তাহার জন্ম হয়। বাল্যকাল হইতেই প্রতাপ বীরত্ব ও সাহসিকতার জন্য বিখ্যাত হইয়া উঠিয়াছিলেন। কথিত আছে যে প্রতাপের কোষ্ঠী গণিয়া জ্যোতিষীরা বলিয়াছিলেন যে তিনি পিতৃদ্রোহী হইবেন। এই জন্য রাজা বিক্রমাদিত্য র্তাহাকে বিশেষ ভাল চোখে দেখিতেন ন। এবং সৰ্ব্বদাই দূরে দূরে রাখিবার চেষ্টা করিতেন। যুবক প্রতাপকে তিনি আগ্রায় বাদশাহী দরবারে পাঠাইয়া দিলেন। প্রতাপাদিত্য বাদশাহ আকবরের সুনজরে পড়িয়া যশোহরে প্রত্যাবৰ্ত্তন করিবার সময় পিতা ও পিতৃব্য বর্তমান থাকা সত্ত্বেও যশোহর রাজ্যের সনদ নিজ নামে করিয়া লইয়া আসিলেন। এইরূপে কোষ্ঠীর ফল ফলিল বলিয়া কথিত । বা যশোহরের ৮১০ মাইল দক্ষিণে যমুনা ও ইছামতীর সঙ্গমস্থলে ধূমঘাট নামক স্থানে এক নূতন নগরী স্থাপন করিয়া তথায় প্রতাপাদিত্যের রাজ্যাভিষেক সম্পন্ন হইল। ধূমঘাটের ধ্বংসাবশেষ এক্ষণে তীরকাটি জঙ্গলের মধ্যে অবস্থিত। এই স্থানে নূতন রাজধানী ও তুর্গ নিৰ্ম্মাণ করিবার কারণ দক্ষিণের সমুদ্রপথ হইতে মগ ও গৰ্ত্ত গীজ আক্রমণ প্রতিহত করিবার সুবিধার জন্য বলিয়া অনুমিত হয়। ধূমঘাটের দুর্গ নিৰ্ম্মাণের প্রধান ভার ছিল প্রতাপাদিত্যের বিশ্বস্ত পাঠান সেনানায়ক কমল খোজার উপর। কিছুদিনের মধ্যে ঈশ্বরীপুর হইতে ধূমঘাট পৰ্য্যন্ত সমস্ত অঞ্চলই যশোহর নামে পরিচিত হইল । o রাজদণ্ড গ্রহণ করিবার পর প্রতাপ বঙ্গোপসাগরের উপকূলভাগে মগ ও পর্তুগীজ বা ফিরিঙ্গী জলদসু্যদের অত্যাচার দমনে মনোনিবেশ করিলেন । এই সময়ে এই জলদসু্যদের লুণ্ঠনে ও অত্যাচারে দক্ষিণবঙ্গ অতিষ্ঠ হইয়। উঠিয়াছিল। তাহারা বহু স্ত্রী পুরুষ ধরিয়া লইয়া ক্রীতদাসরূপে নিয়োজিত করিত এবং ওলন্দাজ ফরাসী ও ইংরেজ বণিকের নিকট বিক্রয় করিত। স্থল হইতে বন্দীদিগকে ধরিয়া লইয়া হাতের তালু ছিদ্র করিয়া তন্মধ্যে সরু বেত চালাইয়া হালি গাথিয় তাহাদিগকে জাহাজের পাটাতনের নীচে বোঝাই দিয়া লইয়া যাইত। খাদ্যের জন্য সকল বিকাল কঁাচ চাউল ছড়াইয়া দিত। ভাগীরথী হইতে চট্টগ্রাম পৰ্য্যন্ত সৰ্ব্বত্র তাহাদের এইরূপ উপদ্রব চলিত। পর্তুগীজ বা ফিরিঙ্গী দস্যগণ পূর্বে হারনাদ নামে অভিহিত হইত, যথা, কবিকঙ্কন চণ্ডীতে “রাত্রিদিন বাহে ডিঙ্গ হারমাদের ডরে”। হারমাদ কথাটি পর্তুগীজ শব্দ আর্মাডা (armada) বা নৌবহর হইতে উদ্ধৃত। চট্টগ্রাম অঞ্চলে এই পর্তুগীজগণকে প্রতীচ কহিত। আলোয়ালের পদ্মাবতী কাব্যে প্রতন্ত্রীচের উল্লেখ আছে। প্রতাপাদিত্য অচিরেই মগ ও হারমাদ দস্থ্যদিগকে বশীভূত করিয়াছিলেন। তাহাদের অনেকে র্তাহার সেনাবাহিনীতে যোগদান করিয়াছিল। চব্বিশ পরগণা, খুলনা, বরিশাল, নোয়াখালি ও চট্টগ্রাম জেলার সমুদ্রতীরে স্থানে স্থানে এই সকল মগ ফিরিঙ্গীদিগের বংশধরের বাস আছে । সুন্দরবনে হরিণঘাটার মোহনায়, সমুদ্রতীরে, সন্দ্বীপে, আদিনাথ ও কাকসবাজারে বহু মগপল্লী আছে। তৎকালে বাংলার দক্ষিণভাগে বা ভাটি অঞ্চলে “দ্বাদশ ভৌমিকের" প্রাধান্ত ছিল। ইহাদিগকে লোকে “বার ভূইয়া" বলিত। শীঘ্রই প্রতাপ বারভূইয়ার শ্রেষ্ঠ ভূইয়ারূপে