পাতা:বাংলায় ভ্রমণ -প্রথম খণ্ড.pdf/২৩৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পূর্ববঙ্গ রেলপথে বাংলাদেশ २२१ কল অবস্থায় থাকিয়া লৌহ পিঞ্জরে নৌকাযোগে আগ্রায় প্রেরিত হন। পথিমধ্যে বারাণসীতে ৫০ বৎসর বয়সে র্তাহার মৃত্যু হয়। কথিত আছে যে, যে চৌষট্টি যোগিনীর ঘাট তিনি একবার বাধাইয়া দিয়াছিলেন এবং যাহার উপর কালীমূৰ্ত্তির প্রতিষ্ঠা করিয়াছিলেন, গঙ্গাস্নান করিবার অনুমতি পাইলে, সেই ঘাটে স্বানের সময়ে তাহার মৃত্যু হয়। কেহ কেহ বলেন বারাণসীতে অঙ্গুরীয়কে লুক্কায়িত বিষপানে তিনি মৃত্যু বরণ করেন। প্রতাপের পতনের পর সম্রাট জাহাঙ্গীর কচুরায়কে “যশোরজিৎ ” উপাধি দিয়া যশোর রাজ্যের সনদ প্রদান করেন। অসময়ে উপকারকারী দুর্গাদাস কচুরায়ের সুপারিশে বাদশাহের নিকট হইতে কয়েকটি পরগণা ও ভবানন্দ মজুমদার উপাধি লাভ করেন। ইনিই নদীয়া রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা । প্রাচীন যশোহর রাজ্যের রাজধানী ঈশ্বরীপুর এখন ধ্বংসস্তুপ ও কৃষিক্ষেত্রে পরিণত হইয়াছে। প্রাচীন তুর্গের মৃৎপ্রাকার, হামামখানা, বারদুয়ারী প্রাসাদের ধ্বংসাবশেষ, প্রতাপাদিত্যের মুসলমান কৰ্ম্মচারিবৃন্দের উপাসনার স্থান টেঙ্গ মসজিদ নামক একটি পুরাতন বৃহৎ মসজিদ এবং যশোরেশ্বরী দেবীর বিগ্রহ অতীত দিনের স্মৃতি বহন করিতেছে। অনেকের মতে কষ্টি পাথরের এই কালী মূৰ্ত্তিতে এরূপ ভীষণভাব প্রতিফলিত হইয়াছে, যাহা সম্বলপুরের সম্বলেশ্বরী মন্দিরের শনিমূৰ্ত্তিতে ভিন্ন অন্য কোথাও দৃষ্ট হয় না। কাহারও মতে যশোরেশ্বরীর আদি মূৰ্ত্তি মহারাজ মানসিংহ অস্বরে লইয়া যান এবং পরে কচুরায় এখানে নূতন মুক্তি প্রতিষ্ঠিত করেন। কিন্তু অধিকাংশের মতে ইহাই প্রাচীন মৃত্তি এবং মহারাজ মানসিংহ শ্ৰীপুর হইতে চাদরায় কেদার রায়ের শীলাময়ী দেবীকে অম্বরে লইয়া যান। যশোরেশ্বরীর আবির্ভাব সম্বন্ধে কিংবদন্তী প্রচলিত আছে, যে ধূমঘাটে যখন প্রতাপাদিত্যের নূতন রাজধানী ও গড় হইতে ছিল, তখন তাহার প্রধান সেনানায়ক কমল খোজ নিৰ্ম্মাণ কার্য্যের তত্ত্বাবধানে থাকা কালীন গভীর অন্ধকার রাত্রে দক্ষিণের অরণ্য মধ্যে এক স্থানে এক অগ্নি শিখা জ্বলিতে দেখিতেন। প্রতাপাদিত্য এই খবর পাইলে জঙ্গল পরিষ্কার করিয়া ইহার উৎপত্তির কারণ সন্ধান করিবার হুকুম করেন। অগ্নি শিখার দিক লক্ষ্য করিয়া গভীর জঙ্গল পরিষ্কার করিলে পুরাতন একটি ধ্বংস-স্তুপ বাহির হয় এবং ইঙ্গর নীচ হইতে যশোরেশ্বরীর প্রস্তর মূৰ্ত্তি পাওয়া যায়। শাস্ত্রজ্ঞ পণ্ডিতের বিচার করিয়া স্থির করিলেন, ইহা একান্ন পীঠের অন্যতম যশোরের পীঠ দেবতা; এই স্থানে দেবীর পাণিপদ্ম পতিত হইয়াছিল। সাড়ম্বরে নূতন মন্দিরে দেবীর পুনঃপ্রতিষ্ঠা হইল। চারিদিকে রাষ্ট্র হইল, প্রতাপের সাহায্যাৰ্থ ভবানী স্বয়ং আবির্ভ তা হইয়াছেন। কবি ভারতচন্দ্র তাই প্রতাপের বিষয়ে লিখিয়াছেন “বরপুত্র ভবানীর প্রিয়তম পৃথিবীর ।” প্রবাদ দেবীর মূৰ্ত্তি জ্বালাময়ী বলিয়া মন্দিরে ছাদ থাকিত না, জাল বাহির হইবার জন্য ফাটিয়া যাইত; সেই জন্য মন্দিরের ছাদে চিমনীর মত ফাক রাখা হইয়াছে। কবিরাম রচিত “দিগ্বিজয় প্রকাশ” নামক পুরাতন পুস্তকে লিখিত আছে যে পুরাকালে অনরি নামক এক ব্রাহ্মণ দেবীর জন্য একশত দ্বার-যুক্ত একটি প্রকাণ্ড মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন, তাছার পর ধেনুকৰ্ণ নামক একজন ক্ষত্রিয় রাজ জীর্ণ মন্দিরের বদলে নূতন আর একটি মাদর নির্মাণ করিয়াছিলেন। যশোরেশ্বরী মন্দির মধ্যে একটি অপরূপ সুন্দর পাথরের "ত্তি অন্নপূর্ণ রূপে পূজিত হইতেছে। যশোরেশ্বরীর ভৈরবের নাম চও ভৈরব