পাতা:বাংলায় ভ্রমণ -প্রথম খণ্ড.pdf/২৪৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পূর্ববঙ্গ রেলপথে বাংলাদেশ ২৩১ দি মৃত্তিকার মধ্যে আটকাইয়া যায়। বহু চেষ্টা সত্ত্বেও অশ্ব পদ তুলিতে অসমর্থ হইলে তারাম লোকজন ডাকাইয়া এই স্থান খনন করাইয়া দেখিতে পান যে মৃত্তিক নিম্নস্থ একটি মন্দির-চুড়ার চক্রে ৰ্তাহার অশ্বের পদ আটকাইয়া গিয়াছে। মৃত্তিক খনন করিতে করিতে ক্রমশঃ একটি দেবমন্দির ও তন্মধ্যে লক্ষ্মী-নারায়ণের বিগ্রহ আবিষ্কৃত হইল। ইহাকে বিশেষ শুভ লক্ষণ মনে করিয়া সীতারাম এই স্থানেই স্বীয় বাসভবন নিৰ্ম্মাণ করিলেন এবং আরও বহু লোকজনকে আনাইয়া এই স্থানে বসবাস করাইলেন। এইরূপে রাজধানী মহম্মদপুরের সৃষ্টি হইল। প্রবাদ, মহম্মদ শাহ নামক স্থানীয় এক ফকিরের নাম হইতে মহম্মদপুর নাম হইয়াছে। অচিরেই সীতারামের প্রভাবে সমগ্র ভূষণ র্তাহার অধিকারভুক্ত হইল এবং বহু দস্থ্যসর্দার তাহার সহিত যুদ্ধে পরাস্ত হইয়া দলবলসহ তাহার সেনাবাহিনীতে যোগদান করিল। সীতারাম স্বাধীন রাজার দ্যায় রাজত্ব করিতে লাগিলেন। শীঘ্রই ভূষণার ফৌজদার মীর আবু তোরাপের সহিত র্তাহার সংঘর্ষ উপস্থিত হইল। সীতারামের সেনাপতি মেনাহাতীর হস্তে আৰু তোরাপ নিহত হইলেন। মেনাহাতীর প্রকৃত নাম রামরূপ (মতান্তরে মৃন্ময়) ঘোষ । ইনি দক্ষিণ রাঢ়ীয় কায়স্থ ছিলেন। বিরাট কলেবর ও বিপুল শক্তির জন্য ইনি “মেনাহাতী” আখ্যায় পরিচিত ছিলেন । মেনাহাতীর অর্থ ছোটখাট স্ত্রী হস্তী, তাহাকে একটি ছোটখাট হাতী বলিয়াই মনে হইত। আবু তোরাপের মৃত্যু সংবাদ শ্রবণে নবাব মুর্শিদকুলী খাঁ মেনাহাতী ও সীতারামকে দমন করিবার জন্য বক্স আলিখা ও দিঘাপতিয়ার দয়ারাম রায়ের নেতৃত্বে বহু সৈন্য সামন্ত প্রেরণ করিলেন । জনশ্রুতি যে মহাবীর মেনাহাতী অক্ষয় কবচের অধিকারী ছিলেন ; কোনরূপ অস্ত্র দ্বারা তাহার দেহ বিদ্ধ হইত না । একদিন দোল মঞ্চের নিকট দিয়া যাইবার সময় সীতারামের জনৈক বিশ্বাসঘাতক কৰ্ম্মচারীর পরামর্শ মত শত্রুসৈন্য তাহাকে অতর্কিতভাবে আক্রমণ করিয়া বন্দী করিয়া ফেলিল । সাত দিন পৰ্য্যন্ত তাহাদের হস্তে নিদারুণ নিৰ্য্যাতন ভোগ করিবার পর আর সহা করিতে না পারিয়া মহাবীর মেনাহাতী স্বীয় অক্ষয় কবচ পরিত্যাগ করেন এবং মৃত্যুকে বরণ করিয়া লন । ১৭১৪ খৃষ্টাব্দে র্তাহার মৃত্যু হয়। কথিত আছে, যে তাহার মৃতদেহ হইতে মস্তকটি কাটিয়া লইয়া মুশিদাবাদে পাঠান হয়। মানুষের মাথা যে এত বড় হইতে পারে তাহ দেখিয় নবাব মুর্শিদকুলী বিস্ময় প্রকাশ করেন এবং বলেন যে এরূপ মহাবীরকে হত্য করা কোন মতেই উচিত হয় নাই, নবাব মাথাটি সসন্ত্রমে মহম্মদপুরে ফিরাইয়া দিলেন। ইতিমধ্যে সেনাপতির মস্তকহীন দেহ যথারীতি সৎকার করিয়া অস্থি সমাহিত করা হয় ; মস্তকটিও তথায় সমাহিত করিয়া সীতারাম একটি উচ্চ সমাধি স্তম্ভ নিৰ্ম্মাণ করাইয়াছিলেন। মহম্মদপুরের কাষ্ঠঘর পাড়া হইতে ভূষণার দিকে যে রাস্তাটি গিয়াছে উহারই উপর মেনাহাতীর সমাধিস্তম্ভ ছিল ; এখন ইহার চিহ্নও নাই । মেনাহাতীর মৃত্যুর পর সীতারামের পতন ঘটে। যুদ্ধে পরাজিত ও বন্দী হইয়া তিনি মুর্শিদাবাদে প্রেরিত হন। কথিত আছে, দয়ারাম রায় বিজয়-চিহ্ন হিসাবে সীতারামের সুন্দর বিগ্রহ দিঘাপতিয়ায় লষ্টয়া যান। দিঘাপতিয়া রাজবাটীতে এই মূৰ্ত্তি এখনও পূজিত হয় ; ইহার পাদদেশে খোদিত আছে “ দয়ারাম বাহাত্র”। দয়ারাম রায়ই সঙ্গে করিয়া সীতারামকে মুর্শিদাবাদ লষ্টয় যান। পথিমধ্যে দিঘাপতিয়ায় যাইবার সময়ে তাহাকে নাটোর রা করাগারে বন্দী করিয়া রাখিয়া যান ; সেই কক্ষ এখনও লোকে দেখাইয়া থাকে