পাতা:বাংলায় ভ্রমণ -প্রথম খণ্ড.pdf/২৫৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পূর্ববঙ্গ রেলপথে বাংলাদেশ २8७ কচুয়ার কমলসাগর নামে প্রকাণ্ড দীঘি এই বংশের প্রতিষ্ঠিত। রাজা হয়নারায়ণদেবের কন্যা কমলা এই দীঘিটি কাটাইয়াছিলেন। কথিত আছে, পুষ্করিণীটি খননের পর কমলা স্বপ্ন পান যে তিনি পুষ্করিণীটি হাটিয়া পার না হইলে উহাতে জল উঠবে না। তদনুসারে তিনি উহা হাটিয়া পার হইতে গেলে মধ্য পথে যাইতে না যাইতে চারিদিক হইতে জল উঠিয় তাহাকে ঘিরিয়া ফেলে ; তদবধি তিনি এই দীঘিতে পদ্ম ফুলে পরিণত হইয়া আছেন। কমলার চারিদিকে জল আসিতেছে দেখিয় তাহার স্বামী তাহাকে শীঘ্ৰ উপরে আসিতে বলিলে তিনি বলেন তিনি উঠিতে পারিতেছেন না। তিনি আরও বলিলেন যে র্তাহার একমাত্র শিশু সন্তানটিকে প্রতিদিন ঘাটে রাখিয়া গেলে তিনি তাহাকে স্তন্তদান করিবেন । সেইমত শিশুটিকে প্রত্যহ সকালে ঘাটে রাখিয়া আসা হইত এবং কমলা জল হইতে উঠিয়া তাহাকে জুধ খাওয়াইতেন। তাহার স্বামী তাহাকে ফিরাইয়া আনিবার জন্য একদিন সকালে ঘাটের নিকট লুকাইয়া রহিলেন এবং কমলা উঠিয়া আসিয়া যখন শিশুকে দুধ খাওয়াইতেছিলেন তখন তাহাকে ধরিয়া ফেলিবার চেষ্টা করেন। কমলা পলাইয়া সেই যে জলে লুকাইলেন তাহার পর আর কখনও উঠেন নাই । কচুয়ায় পুরাতন রাজবাটীর ভগ্নাবশেষ কিছু কিছু এখনও দৃষ্ট হয়। কচুয়ার নিকটবর্তী বেীফল থানার অন্তর্গত কালালিয়া গ্রামে খুব বড় হাট বসে। এ অঞ্চলের মুগের দাইল অতি উৎকৃষ্ট বলিয়া খ্যাত । শিকারপুর—বরিশাল শহর হইতে ১৩ মাইল উত্তরে অবস্থিত শিকারপুর গ্রাম ভারতের একপঞ্চাশৎ শক্তি পীঠের অন্যতম পীঠ । গ্রামটি সুগন্ধা বা সুনন্দা নদীর তীরে অবস্থিত। এখানে বিষ্ণুচক্ৰচ্ছিন্ন সতী দেহের নাসিক পড়িয়াছিল। এই স্থানে দেবীর নাম সুগন্ধা বা উগ্ৰতারা। দেবীর ভৈরব ত্র্যম্বকেশ্বর ঝালকাঠির নিকটবৰ্ত্তী পোনাবালিয়া-সামরাইল গ্রামে অবস্থিত; কথিত আছে, পূর্বকালে পোনাবালিয়াসামরাইলের পাশ্ব দিয়া সুগন্ধা নদী প্রবাহিত ছিল; শিকারপুর ইহার পূর্বকূলে এবং পোনাবালিয়া-সামরাইল পশ্চিমকুলে অবস্থিত ছিল। শিবরাত্রির সময়ে শিকারপুরে খুব বড় মেলা বসে। কোজাগরী পূর্ণিমা হইতে শুামাপূজার দিন পৰ্য্যন্ত এবং দোলযাত্রা উপলক্ষেও এখানে বহু যাত্রীর সমাগম হয়। বরিশাল শহর হইতে মোটরবাস, মোটর লঞ্চ ও নৌকাযোগে শিকারপুর যাওয়া যায়। গৈলা—বরিশাল মাদারীপুর-তারপাশা স্টীমার পথে বরিশাল শহর হইতে প্রায় ৩৫ মাইল দূরবর্তী গৌরনদী স্টেশনে নামিয়া বাখরগঞ্জ জেলার অন্যতম প্রসিদ্ধ গ্রাম গৈলায় যাইতে হয়। গৌরনদী হইতে গৈল। প্রায় ৩ মাইল পশ্চিমে । গৈলা এক সময়ে পণ্ডিতপ্রধান স্থান ছিল। সুপ্রসিদ্ধ ব্যাকরণের টীকাকার পণ্ডিত ত্রিলোচন কবিকণ্ঠাভরণ গৈলার অধিবাসী ছিলেন। এখানে কবীন্দ্র কলেজ নামে একটি সংস্কৃত কলেজ আছে ; গৈলা নিবাসী পণ্ডিত ৮ মদনমোহন কবীন্দ্র ইহার প্রতিষ্ঠাতা। গৈলা গ্রাম হইতে ২ মাইল উত্তর-পশ্চিমে ফুল্লত্রী গ্রাম “পদ্মাপুরাণ" বা “মনসামঙ্গল” গ্রন্থ প্রণেতা প্রসিদ্ধ প্রাচীন কবি বিজয় গুপ্তের জন্মস্থান । পঞ্চদশ শতাব্দীর প্রারম্ভে বিজয় গুপ্তের জন্ম হয়। ১৪৮৪ খৃষ্টাব্দে তিনি “মনসামঙ্গল” রচনা করেন।