পাতা:বাংলায় ভ্রমণ -প্রথম খণ্ড.pdf/২৬১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পূৰ্ব্ববঙ্গ রেলপথে বাংলাদেশ २88 স্থপণ্ডিত ও বঙ্গ ভাষায় কয়েক খানি দার্শনিক ও ধৰ্ম্মবিষয়ক গ্রন্থ রচয়িতা দ্বারভাঙ্গা রাজের ম্যানেজার চন্দ্রশেখর বস্তু এবং মাইকেল মধুসূদন দত্তের “বীরাঙ্গনার পত্রোত্তর কাব্য ” প্রভৃতি গ্রন্থের লেখক কবি হেমচন্দ্র মিত্র বীরনগরের অধিবাসী ছিলেন। বীরনগর এক সময়ে বিশেষ স্বাস্থ্যকর স্থান ছিল এবং ইহার লোক সংখ্যা প্রায় ৪০ হাজার ছিল। ১৮৫৭ খৃষ্টাব্দে ম্যালেরিয়া মহামারীতে এই সমৃদ্ধ পল্লীটি বিধ্বস্ত হইয়া যায় সম্প্রতি কয়েক বৎসর বৈজ্ঞানিক উপায়ে উৎসাহের সঠিত গ্রামে ম্যালেরিয়া দমনের কাৰ্য্য চলিতেছে এবং বহু বিঘা জমি লষ্টয়া এই স্থানে একটি স্বাস্থ্যকর আদর্শ পল্লী বসতি গড়িয়া তুলিবার চেষ্টা হইতেছে। বীরনগরে বিদ্যালয়, দাতব্য চিকিৎসালয়, মিউনিসিপ্যালিটি, দৈনিক বাজার, পানীয় জলের নলকূপ প্রভৃতির সুবিধা আছে। বীরনগরের পাশ্ববৰ্ত্তী পালিতপাড়া গ্রামে প্রায় পৌনে দুইশত বৎসর পূৰ্ব্বে কানাইলাল ও নীলমণি আচার্য নামক দুষ্ট সহোদর দেবী প্রতিম। সাজাইবার প্রসিদ্ধ “ডাকের সাজের” উদ্ভাবন করেন । কৃষ্ণনগর সিটি–কলিকাতা হইতে ৬১ মাইল দূর। ইহা নদীয়া জেলার সদর শহর । কৃষ্ণনগর শহরের উত্তর দিয়। জলঙ্গী নদী প্রবাহিত । জলঙ্গী নদীয়া জেলার উত্তরে মুর্শিদাবাদ জেলার সীমানার নিকটে পদ্মা হইতে উঠিয়া কিছু দূর এই দুই জেলার সীমা রক্ষা করিয়া কৃষ্ণনগর সিটি স্টেশনের কিছু উত্তরে লালগোলা লাইনের নীচ দিয়া চলিয়া গিয়া নবদ্বীপের বিপরীত দিকে ভাগীরথীতে পড়িয়াছে। এককালে গঙ্গার প্রধান ধারা জলঙ্গ দিয়া বহিত । (পাবন দ্রষ্টব্য)। পূৰ্ব্বে কৃষ্ণনগরের নাম ছিল রেউই । নদীয় রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা ভবানন্দ মজুমদারের পৌত্র রাজা রাঘব পুৰ্ব্ব বাসস্থান মাটিয়ারী (“বাণপুর’ স্টেশন দ্রষ্টব্য) তাগ করিয়া এই স্থানে নূতন রাজধানী স্থাপন করেন এবং উহার চতুৰ্দ্দিক পরিখার দ্বারা বেষ্টিত করেন । এই পরিখা “শহর পানার গড়” নামে পরিচিত। রাজা রাঘবের পুত্র মহারাজ রুদ্র এই স্থানের নাম রাখেন কৃষ্ণনগর। কথিত আছে, তৎকালে রেউইএ অনেক গোপের বসতি ছিল এবং তাহারা মহাসমারোহে শ্ৰীকৃষ্ণের পূজা করিত। এইজন্য রুদ্র রেউই এর নাম কৃষ্ণনগর রাখেন। রুদ্ররায়ের সময়ে জমিদারীর আয় বৃদ্ধি পায় এবং তিনি বাদশাহকে ১০ লক্ষ টাকা কর দিতেন। রুদ্রের পৌত্র রঘুরাম বীরত্বের জন্য বিশেষ প্রসিদ্ধ ছিলেন। সেই সময়ে তাহার ন্যায় ধনুৰ্দ্ধারী এদেশে কেহ ছিল না। বারাকোটির যুদ্ধে তিনি মুর্শিদকুলী খার পক্ষ অবলম্বন করিয়া বিশেষ বীরত্বের পরিচয় প্রদান করেন এবং রাজশাহীর বিদ্রোহী রাজা উদয়নারায়ণের সেনাপতি আলী মহম্মদকে তীর বিদ্ধ করিয়া নিহত করেন। সাধারণের নিকট তিনি “রঘুবীর” নামে পরিচিত ছিলেন। রঘুরামের পুত্র মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্রের সময়ে নদীয়া রাজ্য উন্নতির চরম শিখরে আরোহণ করিয়াছিল। নবাব সিরাজ-উদ-দৌলার বিরুদ্ধে ক্লাইভের সহিত যোগদান করায়'পলাশীর যুদ্ধের পর তিনি ক্লাইভের সুপারিশে দিল্লীশ্বরের নিকট হইতে “রাজরাজেন্দ্র বাহাঙ্কুর” উপাধি লাভ করেন। পলাশীর যুদ্ধক্ষেত্রে ব্যবহৃত কয়েকটি কামান তিনি ক্লাইভের নিকট হইতে উপহার লাভ করেন। ঐ কামানগুলি আজিও