পাতা:বাংলায় ভ্রমণ -প্রথম খণ্ড.pdf/২৬৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পূর্ববঙ্গ রেলপথে বাংলাদেশ २{{ প্রাসাদ নিৰ্ম্মাণ করেন ইহা অবিসম্বাদী ঐতিহাসিক সত্য । বল্লালের প্রাসাদের ধ্বংসাবশেষ আজিও গঙ্গার পূর্ববতীরে মায়াপুর হইতে অৰ্দ্ধ মাইল উত্তরে বামনপুকুর গ্রামে বিদ্যমান আছে । প্রাচীন নবদ্বীপের অন্ততঃ একাংশ যে এই স্থানে অবস্থিত ছিল তাহাতে কোন সন্দেহ নাই । - চৈতন্য চরিতামৃত, চৈতন্য ভাগবত ও চৈতন্য মঙ্গল প্রভৃতি বিখ্যাত গ্রন্থে নবদ্বীপই শ্রীচৈতন্যদেবের জন্মস্থান বলিয়া উল্লিখিত আছে, উহাতে মায়াপুরের কোন উল্লেখ নাই। তবে প্রাচীন নবদ্বীপ যে বিভিন্ন নামে পরিচিত বহু পল্লীতে বিভক্ত ছিল তাহার উল্লেখ আছে । নরহরি চক্রবত্তী (বৈষ্ণব নাম ঘনশ্যাম দাস) প্রণীত ‘ভক্তি রত্নাকর” নামক গ্রন্থে নবদ্বীপ মধ্যবৰ্ত্তী মায়াপুৰ্বই চৈতন্যদেবের জন্মস্থান বলিয়া বণিত হইয়াছে, যথা— “নবদ্বীপ মধ্যে মায়াপুর নামে স্থান। যথা জন্মিলেন গৌরচন্দ্র ভগবান ॥ যৈছে বৃন্দাবনে যোগপীঠ সুমধুর। তৈছে নবদ্বীপে যোগপীঠ মায়াপুর ৷ ” শাস্ত্রমতে ভগবানের আবির্ভাব স্থানকে যোগপীঠ বলা হয়। সুতরাং নরহরি চক্ৰবৰ্ত্তীর মতে মায়াপুরই শ্রীচৈতন্যদেবের জন্মস্থান। “ভক্তি রত্নাকর” গ্রন্থে বর্ণিত ঘটনাবলীর ঐতিহাসিকতা বৈষ্ণব ও পণ্ডিত সমাজের বিশেষ অনুমোদিত। শ্রীচৈতন্যদেবের সমসাময়িক কাশীর দণ্ডী সমাজের নেতা প্রকাশানন্দ সরস্বতী ( শ্রীচৈতন্য কর্তৃক প্রদত্ত নবনাম প্রবোধানন্দ সরস্বতী ) প্রণীত “নবদ্বীপ শতক ” ও জগদানন্দের “ প্রেম বিবৰ্ত্ত” নামক গ্রন্থে মায়াপুরের সবিশেষ উল্লেখ আছে। ১২৫২ বঙ্গাব্দে প্রকাশিত “ কায়স্থ কৌস্তুভ” নামক পুস্তকে “উৰ্দ্ধান্নায় তন্ত্র” হইতে ধৃত একটি বচনে মায়াপুরই চৈতন্যদেবের জন্মস্থান বলিয়া উল্লিখিত হইয়াছে, যথা “মায়াপুরে মহেশানি বারমেকং শচীস্বতঃ।” “নদীয়াকাহিনী” নামক ঐতিহাসিক পুস্তকে ও “বিশ্বকোষ” অভিধানে মায়াপুরকেই শ্রীচৈতন্যদেবের জন্মস্থানরূপে উল্লেখ করা হইয়াছে। বস্তুত: প্রাচীন নবদ্বীপের অন্তর্গত মায়াপুর পল্লীই যে শ্রীচৈতন্যদেবের জন্মস্থান সে সম্বন্ধে আরও বহু প্রমাণ পাওয়া যায়। তবে বর্তমান মায়াপুর যে প্রাচীন মায়াপুর এবিষয়ে তথা প্রাচীন নবদ্বীপের প্রকৃত অবস্থান লইয়া মত বিরোধের অবসান আজিও হয় নাই । সুপ্রসিদ্ধ বৈষ্ণব মহাত্মা জগন্নাথদাস বাবাজী সৰ্ব্বপ্রথম বৰ্ত্তমান মায়াপুরের প্রকাশ করেন। তাহার প্রশিযু ঠাকুর ভক্তিবিনোদের সময়ই মায়াপুরের সমধিক প্রচার হয় এবং এখানে মঠ মন্দিরাদির প্রতিষ্ঠা হইতে থাকে। বৰ্ত্তমানে মায়াপুর ক্রমশঃ একটি সুন্দর শহরে পরিণত হইতেছে এবং এখানে বহু দেবায়তন প্রতিষ্ঠিত হইয়াছে। আজকাল নবদ্বীপধামের যাত্রিগণের মধ্যে অনেকেই শহর নবদ্বীপ ও মায়াপুর এই উভয় স্থানই : করিয়া থাকেন। নিম্নে মায়াপুরের প্রধান দ্রষ্টব্য গুলির সংক্ষিপ্ত বিবরণ দেওয়া (ক) গ্ৰীশ্ৰীযোগপীঠ মন্দির বা শ্রীচৈতন্যদেবের জন্মস্থান ঃ-এই মন্দির খুব উচ্চ ও দেখিতে অতি সুন্দর। রাত্রিকালে ইহর চুড়াসকল বিচিত্রবর্ণ বিদ্যুৎ আলোকের দ্বারা উদ্ভাসিত করা হয় এবং বহু দূর হইতে ইহা দৃষ্টিপথে পড়ে। বাংলাদেশের আর