পাতা:বাংলায় ভ্রমণ -প্রথম খণ্ড.pdf/২৭৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পুর্ববঙ্গ রেলপথে বাংলাদেশ Sや> মোহনলাল সসৈন্তে উপস্থিত ছিলেন। সকাল আটটার সময় প্রথম যুদ্ধ আরম্ভ হয় এবং তিন ঘণ্টা পৰ্য্যন্ত উভয় পক্ষের মধ্যে গোলায় গোলায় যুদ্ধ চলিতে থাকে। ক্লাইভ জয়ের আশা মুদূর পরাহত দেখিয়া ইংরেজ সৈন্যকে হটিয়া আসিয়া আম্রকানন মধ্যে অবস্থান করিতে আদেশ দিলেন। এই সময়ে এক পশলা বৃষ্টি হওয়ায় নবাবের সমস্ত বারুদ জলে ভিজিয়া নষ্ট হইয়া যায়, ইংরেজ পক্ষ নিজেদের বারুদ রক্ষা করিতে সমর্থ হন। ইংরেজ সৈন্যকে আম্রকাননে প্রবেশ করিতে দেখিয়া মীরমদন একদল অশ্বারোহী সৈন্য লইয়া আম্রকুঞ্জের দিকে অগ্রসর হন। সহসা ইংরেজ শিবির হইতে— “ছুটিল একটি গোলা রক্তিম বরণ। বিষম লাগিল পায়ে সেই সাংঘাতিক ঘায়ে, ভূতলে হইল মীরমদন পতন।” মীরমদনের পতনের পর মহাবীর মোহনলাল সসৈন্তে আম্রকুঞ্জের দিকে অগ্রসর হইলেন। কিন্তু মীরমদনের পতনের সংবাদ শুনিয়া নবাব সিরাজ-উদ-দৌলা অত্যন্ত বিচলিত হইয়া পড়েন এবং তাহার দক্ষিণ হস্তস্বরূপ মীরজাফরকে ডাকিয়া আনিয়া তাহার পদতলে উষ্ণীষ রাখিয়া এই বিপদ হইতে উদ্ধার করিবার জন্য আবেদন করেন। মীরজাফর সে দিবস তাহাকে যুদ্ধ হইতে নিবৃত্ত হইবার জন্য পরামর্শ দেন। তাহারই পরামর্শ অনুসারে সিরাজ মোহনলালকে যুদ্ধে ভঙ্গ দিবার জন্য আদেশ প্রেরণ করেন। মোহনলাল ইহাতে প্রথমে স্বীকৃত হন নাই। কিন্তু মীরজাফরের কথায় নবাব কর্তৃক পুনঃপুনঃ আদিষ্ট হইয়া তিনি বিরক্তিসহকারে যুদ্ধ হইতে প্রতিনিবৃত্ত হন। মোহনলাল যুদ্ধে ভঙ্গ দিলে নবাব সৈন্য ছত্রভঙ্গ হইয় পড়ে এবং ইংরেজ সৈন্ত র্তাহাদিগকে নব বিক্রমে আক্রমণ করে । ফরাসী সেনাপতি সিনফ্রে কাহারও কথায় রণে ভঙ্গ না দিয়া স্বীয় গোলন্দাজ সৈন্যসহ ইংরেজ সৈন্যের গতি প্রতিরোধ করিতে লাগিলেন । অপরাহ্ন পাঁচ ঘটিকার সময় ইংরেজ সৈন্য নবাবের শিবির অধিকার করিল। ইহার পূর্বেই নবাব উদ্ভারোহণে মুর্শিদাবাদ অভিমুখে চলিয়া গিয়াছিলেন। এইরূপে পলাশীর ইতিহাস বিশ্রুত যুদ্ধের অবসান হইল। এই যুদ্ধে ইংরেজ পক্ষে মাত্র ৭০ জন লোক হত ও আহত হয়। সেই রাত্রিতেই ক্লাইভ পলাশী যুদ্ধক্ষেত্র হইতে প্রায় ৬ মাইল উত্তরে অবস্থিত দাদপুর গ্রামে শিবির সন্নিবেশ করেন এবং পরদিন প্রাতে মীরজাফর তথায় উপস্থিত হইলে তাহাকে বাংলা, বিহার ও ওড়িষ্যার নবাব বলিয়া অভিনন্দিত করেন। দাদপুরে নবাবদিগের একটি বাট ছিল। দাদপুর পলাশীর পরের স্টেশন রেজীনগর হইতে প্রায় ২ মাইল উত্তরে। । ভাগীরথীর গতি পরিবর্তনের ফলে পলাশীর যুদ্ধক্ষেত্রের অধিকাংশ স্থান নদীসাৎ হইয়া এখন চরভূমিতে পরিণত হইয়াছে। যুদ্ধক্ষেত্রের দক্ষিণে এখন তেজনগর বা নূতন পলাশী গ্রাম বসিয়াছে। ১৮০২ খৃষ্টাব্দে ভ্রমণকারী ভ্যালেটিন পলাশীর বিখ্যাত আম্রকুঞ্জ দেখিয়াছিলেন । বাগানের শেষ আম্রবৃক্ষটি শুষ্ক হওয়ায় ১৮৭৯ খৃষ্টাব্দে তাহার মূলদেশ উৎপাটিত করিয়া পলাশী বিজয়ের স্মৃতিস্বরূপ বিলাতে পাঠাইয়া দেওয়া হয়। পুরাতন আমগাছের আর কোন চিহ্নই নাই। পলাশী পরগণার কিছু অংশ রাণী ভবানীর জমিদারীর অন্তর্গত ছিল । কথিত আছে, তিনি এখানে একলাখ আমগাছের বাগান