পাতা:বাংলায় ভ্রমণ -প্রথম খণ্ড.pdf/২৭৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পূৰ্ব্ববঙ্গ রেলপথে বাংলাদেশ ২৬৭ নিকট হইতে উপহার লাভ করেন। কথিত আছে, একবার নন্দকুমার বঙ্গের নানাস্থান হইতে এক লক্ষ ব্রাহ্মণ নিমন্ত্রণ করিয়া আনিয়া ভোজন করাইয়াছিলেন এবং তাহাদের পদধূলি সংগ্ৰহ করিয়া সযত্নে রাখিয়াছিলেন। এই ধূলি কুঞ্জঘাটার রাজবাটীতে এখনও রক্ষিত আছে । নন্দকুমারের পৈতৃক নিবাস ছিল বীরভূম জেলার অন্তর্গত ভদ্রপুর বা ভাতুর গ্রামে। এই স্থানেই তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তথায় তাহার জন্ম ভবন এখনও দৃষ্ট হয়। তাহা ছাড়া নন্দকুমার নিৰ্ম্মিত দেওয়ান খান আছে। নন্দকুমারের পিতা মুর্শিদাবাদে রাজস্ব বিভাগে কাৰ্য্য করিতেন। বাল্যকাল হইতে নন্দকুমার পিতার সহিত থাকিয়া এই কার্য্যে দক্ষতা অর্জন করেন এবং প্রথমে আমিনী কাৰ্য্য হইতে আরম্ভ করিয়া স্বীয় প্রতিভাবলে বাংলার নবাব মীরজাফরের দেওয়ানের পদ পর্য্যন্ত লাভ করেন । মীরজাফর তাহার উপর বিশেষভাবে নির্ভর করিতেন । তিনিই দিল্লীর বাদশাহকে অনুরোধ করিয়া নন্দকুমারকে মহারাজা উপাধি প্রদান করাইয়াছিলেন। তাহার প্রতিপত্তি দর্শনে ঈর্ষান্বিত হইয়া কতকগুলি লোক র্তাহার শত্রুত সাধনে প্রবৃত্ত হয়। পলাশীর যুদ্ধের পর ইংরেজ কার্যতঃ এ দেশের অধিকার লাভ করিলে ভারতের প্রথম গভর্ণর জেনারল ওয়ারেন হেস্টিংসের সহিত নন্দকুমারের ভীষণ মনোমালিন্ত হয়। পরে তিনি কিরূপে জাল করার অপরাধে অপরাধী গণ্য হইয়। তৎকালীন ইংলণ্ডীয় আইন অনুসারে মুখ্ৰীম কোর্টের বিচারে প্রাণদণ্ডে দণ্ডিত হন তাহ শিক্ষিত বাঙালী মাত্রেই অবগত আছেন । নন্দকুমারের অসাধারণ প্রতিভা ও বুদ্ধিমত্তার কথা তাহার শত্রুপক্ষও স্বীকার করিয়াছেন। খৃষ্টীয় অষ্টাদশ শতাব্দীতে রাষ্ট্র নৈতিক ব্যাপারে ভারতীয়গণের মধ্যে তিনি বিশেষ প্রভাবশালী ও ক্ষমতাপন্ন ছিলেন ; এই জন্য তিনি “কাল কৰ্ণেল” আখ্যা পাইয়াছিলেন। কলিকাতায় তাহার র্যাসী হইলে বহু লোক ব্ৰহ্মহত্যার জন্ত কলিকাতা পরিত্যাগ করিয়া অন্যত্র বাস করেন। তাহার মৃত্যুতে এ দেশে চারিদিকে ক্ষোভের সঞ্চার হয় । নন্দকুমারের প্রতিষ্ঠার প্রমাণ নিয়ে উদ্ধত গ্রাম গীতি হইতে বুঝিতে পারা যায়। মহারাজ নন্দকুমার রে তোর রাজপাট জমিদারী কারে দিলিরে নন্দকুমার রায় ছিল বাংলার অধিকারী। হেষ্টিং সাহেব এলো জান করিবারে বারি। নন্দকুমারের মা র্কাদে ঐ গঙ্গার পানে চেয়ে আর না আসিবে বাছা যোড়া ডিঙ্গি বেয়ে। খোপেতে কৌতর কাদে ফোঁহারাতে হাস যোড় বাংলায় কাদে সোনার গুলতে বঁাশ । ছোট রাণী উঠে বলে বড় রাণী গো দিদি। সিতে ছিল কড়া সিতুর বঞ্চিত করলেন বিধি । (মুর্শিদাবাদ কাহিনী—নিখিলনাথ রায়, ৪০৯ পৃষ্ঠা)