পাতা:বাংলায় ভ্রমণ -প্রথম খণ্ড.pdf/২৮০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বাংলায় ভ্রমণ سریاب এই গ্রাম্য গীতে দুইটি রাণীর কথা থাকিলেও তাহার এক পত্নী ক্ষেমঙ্করীর কথাই শুধু জানা যায়। নন্দকুমারের একমাত্র পুত্র রাজা গুরুদাস গোঁড়াধিপতি উপাধি পাইয়াছিলেন। কলিকাতার বীডন উদ্যানের নিকট রাজা গুরুদাসের নামে একটি রাস্তা এখনও আছে। কলিকাতায় নন্দকুমারের আবাস বাটীর স্থলেই বীডন উদ্যান হইয়াছে। কাশীমবাজার-কলিকাতা হইতে ১১৮ মাইল দূর। এই স্থান বহরমপুরের উত্তরে ও সৈয়দাবাদের পূর্বদিকে অবস্থিত। মুর্শিদাবাদের অভু্যদয়ের পূর্ব হইতেই কাশীমবাজার বাণিজ্যের কেন্দ্র হিসাবে প্রসিদ্ধি লাভ করে। পূর্বে ইহার পার্শ্ব দিয়া ভাগীরথী প্রবাহিত হইত। মুর্শিদাবাদ ও বহরমপুরের মধ্যে তৎকালে একটি বড় বাক ছিল এবং বহমরপুর । হইতে নৌকা যোগে মুর্শিদাবাদ যাইতে প্রায় একদিন লাগিত। ১৭৮৮ খৃষ্টাব্দে একটি খাল কাটিয়া এই বঁাকের দুই প্রান্ত সংলগ্ন করিবার ফলে, সেই খাল দিয়াই ভাগীরথীর প্রবাহ চলিতে আরম্ভ করে এবং ফলে বড় বাকটি একটি বাওড় বা বদ্ধ জলাশয়ে পরিণত হয়। এই কারণেই ভীষণ ব্যাধির প্রকোপে বঁাকের উপর অবস্থিত কাশীমবাজার প্রভৃতি বন্দর ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এই বঁাকের উপর কাশীমবাজারে ইংরেজদিগের, কালিকাপুরে ওলন্দাজদিগের, সৈয়দাবাদের শ্বেতাখার বাজারে (বর্তমান নাম আমানিগঞ্জ) আৰ্ম্মেনীয় দিগের ও সৈয়দাবাদ ফরাসডাঙ্গায় ফরাসীদিগের বাণিজ্য কুঠি অবস্থিত ছিল। কাশীমবাজার ও নিকটপত্তী এই সকল স্থানে তৎকালে রেশমের বিস্তৃত কারবার ছিল। কথিত আছে, যে কাশীমবাজারের সমৃদ্ধির সময় এখানে এত অধিকসংখ্যক ঘন সন্নিবিষ্ট অট্টালিকা ছিল যে লোকে পর পর ছাদের উপর দিয়া দুই তিন ক্রোশের উপর চলিয়া যাইতে পারিত। ইংরেজগণের সহিত বিবাদ উপস্থিত হইলে ১৭৫৭ খৃষ্টাব্দে নবাব সিরাজ-উদদৌলা কাশীমবাজারের ইংরেজ কুঠি আক্রমণ করেন । সেই সময়ে ওয়াটস্ সাহেব কুঠির রেসিডেন্ট ও ওয়ারেন হেষ্টিংস একজন সামান্ত কৰ্ম্মচারী ছিলেন। উভয়েই বন্দী হইয়া মুর্শিদাবাদে প্রেরিত হন। কলিকাতা মহানগরীর প্রতিষ্ঠাতা জব চাণক ১৬৫৮ খৃষ্টাব্দে বাৎসরিক ২০ পাউণ্ড অর্থাৎ প্রায় ৩০০ টাক বেতনে কাশীমবাজার কুঠির সহকারী অধ্যক্ষ ছিলেন। সপ্তগ্রামের পতনের পর ও কলিকাতার উত্থানের পূৰ্ব্বে কাশীমবাজার বাংলার সৰ্ব্বপ্রধান বাণিজ্য কেন্দ্র ছিল। সে সময়ে পদ্মা, ভাগীরথী ও জলঙ্গীর মধ্যবৰ্ত্তী ভূখণ্ড কাশীমবাজার দ্বীপ নামে কথিত হইত। অষ্টাদশ শতাব্দীর প্রারম্ভে মুর্শিদাবাদে বাংলার রাজধানী ঢাকা হইতে স্থানান্তরিত হইলে কাশীমবাজারের বাণিজ্য গৌরব বহুগুণ বদ্ধিত হয়। কাশীমবাজারই মুর্শিদাবাদ-রেশম শিল্পের প্রধান কেন্দ্র ছিল । নানা রকমের রেশমী কাপড় এখানে প্রস্তুত হইত। ইউরোপের জন্য গাউনপিস কোড়, অসমীয়া মহিলাদিগের জন্য মেঘলা ও রিয়া, ব্রহ্মদেশীয়দিগের জন্য ফুলিকাট্‌ চেক্‌, বাংলা ও আরব দেশের জন্য বিভিন্ন নমুনার রেখী, ধারী ও চারখানা, বাংলা ও মহারাষ্ট্রের জন্য মটকা ও চেলীর ধুতি ও শাড়ী, বাংলার জন্য শাদ রেশমের তাজপাড়, কলকাপাড়, পদ্মপাড়, ভোমরাপাড় শাড়ী, ধানী, কটুকাপাড়, ফিতাপাড়, খুন্সীপাড়, চুড়িপাড় ধুতি, বালুচর বুটীদার শাড়ী, উত্তর ভারতের জন্য নানা রকম চুড়ী প্রভৃতি প্রস্তুত হইত। বর্তমানে কাশীমবাজারের পূর্ব গৌরবের চিহ্ন বিশেষ কিছুই নাই। ভাগীরথীর মজিয়া যাওয়া বাওড়ের ধারে ইংরেজ রেসিডেন্সীর ভগ্নাবশেষ ও পাশ্বে একটি সমাধিস্থান