পাতা:বাংলায় ভ্রমণ -প্রথম খণ্ড.pdf/২৮৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পূর্ববঙ্গ রেলপথে বাংলাদেশ ২৭৩ প্রথারও সংস্কার করেন । র্তাহার সময়ে নিজামত, দেওয়ানী, কাজী ও ফৌজদারী এই চারি প্রকারের আদালত প্রতিষ্ঠিত ছিল । নিজামত আদালতে তিনি কাজী মুফতী ও উলেমা গণের সাহায্যে স্বয়ং বিচার করিতেন। বিচারে তিনি কঠোর স্যায়পরায়ণ ছিলেন । কথিত আছে, ন্যায়ের অনুরোধে তিনি নিজের একমাত্র পুত্রকে প্রাণদণ্ডে দণ্ডিত করেন এবং হুগলীর কোতোয়াল একটি বালিকাকে অপহরণ করায় মুর্শিদকুলী খাঁর আদেশে লোষ্ট্র নিক্ষেপে নিহত হন। মুর্শিদকুলী খাঁর এক জন মাত্র পত্নী ছিলেন। র্তাহার নাম নসেরুবাহু বেগম। মুর্শিদকুলী খাঁ বিলাসিত সহা করিতে পারিতেন না ; তাহারাদিতেও তিনি সংযমী ছিলেন বলিয়া কথিত । কেবল বরফ ব্যবহার করিতেন বলিয়া রাজমহল পাহাড়ে বরফ জমাইবার ব্যবস্থা করিয়াছিলেন। তিনি ধাৰ্ম্মিক ও বিদ্বান ছিলেন। কথিত আছে, বহু ফকীর ও দরিদ্র ব্যক্তি প্রত্যহ তাহার নিকট হইতে আহার পাইত এবং পশু, পক্ষী, কীট পতঙ্গাদিকেও আহার দিতেন । তুর্ভিক্ষ যাহাতে না হয় সেজন্য তিনি বিশেষ চেষ্টিত থাকিতেন। ইউরোপীয় বণিকগণ যাহাতে আহারের প্রয়োজনের বেশী শস্যাদি জাহাজে উঠাইতে না পারেন সেজন্য হুগলীর ফৌজদারের প্রতি বিশেষ আদেশ ছিল। সরকারী কাগজপত্রে তিনি লাল কালীতে সহি করিতেন । মুর্শিদকুলী খা মুর্শিদাবাদকে রাজধানীর উপযুক্ত করিয়া নিৰ্ম্মাণ করিয়াছিলেন। বৰ্ত্তমান নিজামত কেল্লা নামক স্থানে কেল্লা, প্রাসাদ, দরবারগুহ প্রভৃতি নিৰ্ম্মিত হইয়াছিল। তাছার দরবারগৃহ বা “চেহেল সেতুন” চল্লিশটি স্তম্ভ সংযুক্ত ছিল ; ইহাদের কোনও চিহ্ন মাত্র নাই। বৰ্ত্তমান স্ববৃহৎ মণিবেগমের মসজিদ যে স্থানে অবস্থিত, সেই স্থানেই চেঙ্গেলসেতুন বিরাজ করিত। কাটুরার বিরাট মসজিদটি শুধু এখনও তাহার নাম ঘোষণা করিতেছে। যদিও ভূমিকম্পে মসজিদটি ভাঙ্গিয়া গিয়াছে, তথাপি উহা মুর্শিদাবাদে, একটি প্রধান দ্রষ্টব্য বস্তু। শহরের পূর্বদিকে লালবাজার নামক মহল্লায় ইঙ্গ অবস্থিত ; লাল বা পশ্চিম দেশীয় নবাব সরকারের কৰ্ম্মচারিগণ এই স্থানে বাস করিতেন বলিয়া ইহার নাম হয় লালবাজার । ১১৩৭ হিজরায় (১৭২৩ খৃষ্টাব্দে) মুর্শিদকুলখা মক্কাশরীফের স্বপ্রসিদ্ধ বৃহৎ মসজিদের অনুকরণে এই মসজিদ প্রতিষ্ঠা করেন এবং ইহার চারিপাশে একটি বাজার বসাইয় ছিলেন। কার্টুর বা বাজারের মধ্যে অবস্থিত বলিয়া ইহার নাম কাটুর মসজিদ। সোপান শ্রেণী পার হইয়৷ পূৰ্ব্বমুখী তোরণ দ্বারের উপর দ্বিতল নহবৎখানা, তাহার পরেই একটি প্রকাণ্ড সমচতুস্কোণ অঙ্গন দৈর্ঘ্যে ও প্রস্থে ১৬৫ ফুটেরও অধিক। ইহার পরই ভগ্নেমূখ পাঁচটি গম্বুজ বিশিষ্ট বিরাট মসজিদ। ছোট ছোট বাংলা ইটে এই বিশাল গম্বুজগুলির খিলান কিরূপে নিৰ্ম্মিত হইয়াছিল তাহা ভাবিলে বিস্মিত হইতে হয়। চারিকোণের চারিটি মিনারের দুইটি মাত্র এখনও অবশিষ্ট ; দক্ষিণপশ্চিমের মিনারে উঠতে পারা যায় এবং তথা হইতে মুর্শিদাবাদের দৃশ্ব অতি সুন্দর দেখায়। মসজিদ অঙ্গনের তিন দিকে দ্বিতল বাটতে নীচের তলায় দোকান ছিল এবং উপরের তলায় কোরাণ পাঠকদিগের বাসস্থান নির্দিষ্ট ছিল। কথিত আছে, এই মসজিদে ৭• • কারী বা কোরাণ পাঠক থাকিতেন। মসজিদ নিৰ্ম্মাণের দুই বৎসর পরে ১৭২৫ খৃষ্টাব্দে সুদীর্ঘকাল রাজত্ব করিবার পর মুর্শিদকুলী খাঁর মৃত্যু হয় এবং র্তাহার ইচ্ছা ও ব্যবস্থা অনুসারে মসজিদের সোপান শ্রেণীর নীচে একটি ক্ষুদ্র প্রকোষ্ঠে তাহাকে সমাহিত করা হয়। তিনি বলিয়াছিলেন এই স্থানে সমাহিত হইয়া ভক্ত উপাসক মণ্ডলীর 18