পাতা:বাংলায় ভ্রমণ -প্রথম খণ্ড.pdf/২৯০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

૨૧૪ বাংলায় ভ্রমণ পলাশী যুদ্ধের অব্যবহিত পূর্বে মীরজাফরের সহিত কাশীমবাজারের ইংরেজ কুঠিয়াল ওয়াটুসের গুপ্ত সন্ধি হয়। এই মন্ত্রণায় দুর্লভরাম, জগৎশেঠ প্রভৃতি যোগ দিয়াছিলেন। • কথিত আছে ওয়াটুস সাহেব গোপনতার জন্য পান্ধি করিয়া পর্দানশীন রমণী সাজিয়া মন্ত্রণায় যোগ দিতে আসিয়াছিলেন। ১৭৫৭ খৃষ্টাব্দের ৩রা জুলাই তারিখে নবাব মীরজাফরের পুত্র মীরণের প্ররোচনায় মহম্মদীবেগ নামক এক বাক্তির হস্তে জাফরগঞ্জের বাটতে হতভাগ্য কারারুদ্ধ সিরাজ মাত্র ২০ বৎসর বয়সে নৃশংভাবে নিহত হন । কথিত আছে, মীরণের অনুচরবর্গ সিরাজকে হত্যা করিতে অনুরুদ্ধ হইলে তাহারা কেহই সম্মত হন নাই। অবশেষে আলিবদ এবং তাহার বেগমের অল্পে ও যত্নে পালিত কৃতঞ্জ মহম্মদী বেগ এই কাৰ্য্যে অগ্রসর হয়। সৈয়র-মুতাক্ষরীনে লিখিত আছে, মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত হইয়া এবং ঈশ্বরের নিকট প্রার্থনা করিয়া সিরাজ একবার মাত্র জিজ্ঞাসা করিয়াছিলেন রাজ্যের এক প্রান্তে সামান্তভাবেও কি তাহাকে জীবন যাপন করিতে দেওয়া যায় না। পর মুহুর্তেই বলিয়া উঠেন, “ না, তাহারা তা দিবে না” এবং সঙ্গে সঙ্গেই ঘাতকের তরবারির আঘাতে খণ্ডিত হইয়৷ ভূলুষ্ঠিত হন। ষে গৃহে সিরাজকে নিহত করা হইয়াছিল তাহা এখন পড়িয়া গিয়াছে এবং স্থানটিকে প্রাচীর বেষ্টিত করিয়া রাখা হইয়াছে। ইহা বৰ্ত্তমান জাফরগঞ্জ প্রাসাদের উত্তর-পূর্ব কোণে অবস্থিত। মুর্শিদাবাদবাসিগণ এই স্থানটিকে এখনও “নিমকহারামী দেউড়া” বলিয়া থাকেন। জাফরগঞ্জের প্রাসাদে মীরণের বংশধরগণ এখনও বাস করেন । জাফরাগঞ্জ নাম মীরজাফরের নাম হইতে হইয়াছে । কেহ কেহ বলেন, মুর্শিদকুলী খাঁর অপর নাম জাফর র্থ হইতে হইয়াছে। এই জাফরাগঞ্জেই আবার মীরজাফর এবং তাহার দুই পত্নী মণি বেগম ও বচু বেগম হইতে তদ্বংশীয় নবাব-নাজিমদিগের সমাধিভবন, ইহা পশ্চিম মুখে রাজপথের উপরে অবস্থিত এবং সমাধিদ্বারা পরিপূর্ণ হইয়া গিয়াছে। ইহা মুর্শিদাবাদের একটি দ্রষ্টব্য স্থান । ইহা সযত্বে রক্ষিত আছে। প্রতিদিন একশত কারী বা কোরাণ পাঠক এই স্থানে আসিয়া মৃতদিগের উদ্দেশ্যে কোরাণ পাঠ করেন। সিরাজের হত্যার পর তাহার মৃতদেহ হস্তিপুষ্ঠে তাহার মাতার বাটীর সম্মুখ দিয়া সারা মুর্শিদাবাদ শহরে ঘুরাইয়া খোশবাগে মাতামহ আলিবর্দী খাঁর সমাধির নিকট সমাহিত করা হয়। খোশবাগ—মুর্শিদাবাদের লালবাগ মহল্লার কিছু দক্ষিণে ভাগীরথীর অপর বা পশ্চিমকুলে অবস্থিত। নদীকূলে উদ্যান মধ্যে অবস্থিত এই সমাধি ভবনটি এখানকার অপর একটি দ্রষ্টব্য। আলিবর্দী খাঁ তাহার মাতাকে সমাহিত করিবার জন্য এই মনোরম উদ্যানটি নিৰ্ম্মাণ করেন এবং তিনি নিজেও মৃত্যুর পূর্বে প্রকাশিত ইচ্ছানুসারে এই স্থানে সমাহিত হন। আলিবর্দীর দক্ষিণে র্তাহার পত্নীর এবং সিরাজের পাদদেশে তৎপত্নী লুৎফউন্নেসার সমাধি। সিরাজের পূর্বপাশ্বে র্তাহার ভ্রাতা মির্জা মেহেদীর সমাধি ; কথিত আছে মীরজাফর সিংহাসনে আরোহণ করিলে পঞ্চদশ বর্ষীয় মির্জা মেহেদী প্রথমে কারারুদ্ধ হন এবং পাছে মুক্ত হইয়া মসনদের দাবীদার হন সেই আশঙ্কায় তাহাকে হত্যা করিবার জন্য মীরজাফর পুত্র মীরণকে আদেশ দান করেন, সৈয়র মুতাক্ষরণে লিখিত আছে দুই খানি তক্তার মধ্যে বালককে দড়ি দিয়া কষিয়া বাধিয়া হত্যা করা হয়। এই সমাধিগৃহটির মধ্যে আরও দুইটি কবর