পাতা:বাংলায় ভ্রমণ -প্রথম খণ্ড.pdf/২৯১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পূর্ববঙ্গ রেলপথে বাংলাদেশ ২৭৯ আছে। ইহা ছাড়া খোশবাগে আরও সমাধি দৃষ্ট হয়। পূৰ্ব্বদিকে ইহার একটি সুবৃহৎ প্রবেশদ্বার আছে; ইহার চারিদিক প্রাচীর বেষ্টিত এবং ইঙ্গ হুইট প্রাঙ্গনে বিভক্ত । সিরাজের হত্যার পর আলিবন্দী খার বেগম ও কন্যা ঘসেটি ও অামিন বেগম ও সিরাজ মহিষী লুৎফউন্নেসা ও শিশু কন্যা উম্মৎ জহুরা নানা রূপ লাঞ্ছিত ও কারাগারে বন্দী থাকিবার পর ঢাকায় নির্বাসিত হন । কথিত আছে, সিরাজের মৃত্যুর পর লুৎফউন্নেসাকে পুনরায় বিবাহের কথা বলিলে তিনি সদৰ্পে বলিয়াছিলেন যে যে হস্তিপুষ্ঠে চলিতে অভ্যস্ত, সে কি কখনও গর্দভ পুষ্ঠে আরোহণ করে ? কিছু কাল ঢাকায় থাকিবার পর ইংরেজদের চেষ্টায় লুৎফউন্নেসা মুর্শিদাবাদে আনীত হইয়া নবাব আলিবর্দী ও সিরাজের সমাধির তত্ত্বাবধানের ভার পান। তিনি নিজের জন্য মাসিক ১০০ টাকা বৃত্তি এবং সমাধির জন্য মাসিক ৩০৫২ টাকা বৃত্তি পাইতেন। তাহার জীবিত কালেই কন্যা উম্মৎ জহুরার মৃত্যু হয়। সুতরাং লুৎফউন্নেসার পর তাহার চার দৌহিত্রী সমাধি তত্ত্বাবধানের ভার পান। এখন ইহা সরকারের হাতে । মীরজাফর সিংহাসনে উঠিয়া নানাদিক্ দিয়া অর্থাভাব বোধ করেন এবং দেওয়ান রায়তুর্লভ ও শেঠদিগকে উৎপীড়ন করিতেন। এইরূপে তাহাদিগের সহিত বিশেষ মনোমালিন্তের সৃষ্টি হয়। অতঃপর মীরজাফর ইংরেজদিগের কবল হইতে নিজেকে মুক্ত করিবার প্রয়াস পান। ইংরেজের অতঃপর তাঁহাকে সিংহাসনচ্যুত করিয়া তাহার জামাতা মীরকাসিমকে মসনদে স্থাপন করেন। মীরকাসিম রাজধানী মুর্শিদাবাদ হইতে মুঙ্গেরে লইয়া গিয়া তাহার সেনাবাহিনী ইউরোপীয় আদর্শে সুগঠিত করেন এবং অযোধ্যার নবাবের সহিত যোগ দিয়া প্রথম হইতেই ইংরেজদের প্রভাব খৰ্ব্ব করিয়া স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠায় যত্নবান হন। বাণিজ্যের শুল্ক লইয়া ইংরেজ কোম্পানির সহিত র্তাহার বিবাদ সুরু হয় ; কোম্পানি এবং কোম্পানির কৰ্ম্মচারীরা বিনা শুল্কে ব্যবসায় করিবার দাবী করেন, ইহার উত্তরে নবাব দেশী বিদেশী সকল ব্যবসায়ীকেই শুল্ক মকুফ আদেশ দান করেন। কোনও মিটমাট না হওয়ায় যুদ্ধ বাধিয়া যায়। ইংরেজদের পাটনাস্থ কুঠির জন্য প্রেরিত অস্ত্ৰ শস্ত্র বোঝাই কয়েক খানি নৌকা গঙ্গাপথে মুঙ্গের দিয়া যাইবার সময় নবাব কর্তৃক অধিকৃত হয়। নবাব পক্ষীয় সেনা কর্তৃক কাশিমবাজার কুঠিও অধিকৃত হয়। ইহার পর ইংরেজ পক্ষ মুর্শিদাবাদ অধিকার করে। কিন্তু উভয় পক্ষে সত্যকার যুদ্ধ মুর্শিদাবাদ হইতে ২০ মাইল উত্তরে স্বতীর নিকট গিরিয়ার প্রান্তরে বাঁশলই ও ভাগীরথীর মোহানার নিকট ১৭৬৩ খৃষ্টাব্দের ১লা অগস্ট মাসে সংঘটিত হয়। এই যুদ্ধে নবাব-সৈন্য পরাজিত হয়। ইহা গিরিয়ার দ্বিতীয় যুদ্ধ বা স্বতীর যুদ্ধ নামে পরিচিত। (পূর্ব ভারত রেলপথের ব্যাগুেল-বারহাড়োয় শাখার জঙ্গীপুর রোড স্টেশন দ্রষ্টব্য)। গিরিয়ায় পরাজিত হইয়া নবাব সৈন্য রাজমহল হইতে ৬ মাইল দক্ষিণ-পূৰ্ব্বে গঙ্গার তীরে উয়া নালায় শিবির স্থাপন করে। ১১ই অগস্ট ইংরেজ সন্য উধুয়ানালার ৪ মাইল দক্ষিণ পূৰ্ব্বে ফুদকিপুর নামক স্থানে শিবির স্থাপন করে। উধয়া নালার সুন্দর অবস্থান হেতু ইংরেজ সৈন্য প্রথমে কিছু করিয়া উঠিতে পারে নাই; অবশেষে ৪ঠা সেপ্টেম্বর রাত্রিশেষে ইংরেজ বাহিনী কৌশলে এবং অতর্কিতে নবাব পক্ষীয়