পাতা:বাংলায় ভ্রমণ -প্রথম খণ্ড.pdf/২৯৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পূর্ববঙ্গ রেলপথে বাংলাদেশ २४७ সৈয়র-মুতাক্ষরণে লিখিত হইয়াছে যে কবরের মধ্যে নামইবার জন্য মৃতদেহ যখন তুলিয়া ধরা হয় তখন এই জনসমুদ্র হইতে এরূপ শোকধবনি ও রোদন উথিত হইয়াছিল যেন আকাশ বিদীর্ণ হইয়াছিল এবং ইহার তুলনা কেহ কখনও দেখে নাই। ইহা হইতে নওয়াজেসের জনপ্রিয়তার প্রমাণ পাওয়া যায় । ১৭৬৩ খৃষ্টাব্দে ২৪এ জুলাই ইংরেজ সৈন্তের হস্তে এই মোতিঝিলে নবাব মীর কাসিমের সৈন্যগণ পরাজিত হইয়া গিরিয়ায় গিয়া শিবির স্থাপন করে। ইংরেজদের দেওয়ানী গ্রহণের পর ১৭৬৬ খৃষ্টাব্দের ২৯শে এপ্রিল মোতিঝিল প্রাসাদে ক্লাইভ ধুমধামের সহিত প্রথম পুণ্যাহ সম্পন্ন করেন। ১৭৭২ খৃষ্টাব্দ পর্যন্ত প্রতি বৎসর মোতিঝিলে পুণ্যাহ হইয়াছিল; ইহার পর রাজস্ব বিভাগ কলিকাতায় চলিয়া যায়। মোতিঝিলের প্রাসাদে নবাব দরবারের ইংরেজ রেসিডেণ্টগণ কয়েক বৎসর বাস করিয়াছিলেন । মোতিঝিলের পূর্ব তীরে কোয়ারপাড়া বা কুমারপুর গ্রামে রাধামাধবের স্নান যাত্রা উপলক্ষে একটি বড় মেলা হয়। কথিত আছে, খৃষ্টীয় সপ্তদশ শতাব্দীর প্রারম্ভে সুপ্রসিদ্ধ জীব গোস্বামীর শিষ্য হরিপ্রিয়া ঠাকুরাণী বৃন্দাবন হইতে আসিয়া এই স্থানে রাধামাধব বিগ্রহ প্রতিষ্ঠা করেন; অপর মতে হরিপ্রিয়া ঠাকুরাণীর শিষ্য জীব গোস্বামীর বংশীয় বংশীবদন গোস্বামী এই মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। জনশ্রুতি, এক্রাম উদ্দৌলার মৃত্যুর পর নওয়াজেস মহম্মদ খ৷ মন্দিরের বাদ্যধ্বনিতে অত্যন্ত বিরক্তি অনুভব করেন এবং বৈষ্ণবগণকে বিতাড়িত করিবার জন্য গোসাঞজীর নিকট মুসলমানী খানা পাঠাইয়া দেন। গোসাঞজীর সম্মুখে থালার ঢাকা খুলিলে দেখা গেল খানার পরিবর্তে এক ছড়া যুই ফুলের মাল। রহিয়াছ। নওয়াজেস্ব মহম্মদ খাঁ এই খবর অবিশ্বাস করিয়া পুনরায় নিজে দেখিয়া খান প্রেরণ করেন। সে বারও খানার বদলে যুই ফুলের মালা পাওয়া গেল। তখন তিনি অত্যন্ত বিস্মিত হন এবং গোসাঞজীকে ভক্তি করিতে থাকেন। তিনি মন্দিরের সমীপস্থ চারিটি ঘাটের নিকট মাছ ধরিতে বা পাখী মারিতে নিষেধ করিয়া আদেশ জারি করেন । মোতিঝিলের পূর্বদিকে মুবারক মূঞ্জিল নামে নবাব বাহারদিগের একটি মনোরম উদ্যান আছে; মুর্শিদাবাদের পতনের শেষের দিকে এই স্থানে নিজামত আদালত ও সদর দেওয়ানী আদালত অবস্থিত ছিল । ১৮৩১ খৃষ্টাব্দে এই পরিত্যক্ত বাটীগুলি নবাব হুমায়ুনজাকে বিক্রয় করা হয় এবং তিনি তথায় লাল বাংলা নামক একটি অট্টালিকা নিৰ্ম্মাণ করিয়া স্থানটিকে একটি সুন্দর উদ্যানে পরিণত করেন। মুর্শিদাবাদের নবাব নাজিমদিগের সুপ্রসিদ্ধ মসনদ যাহা এক্ষণে কলিকাতায় ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালে স্থানান্তরিত হইয়াছে, কিছুকাল লাল বাংলায় রক্ষিত ছিল। ১৮১৭ হইতে ১৮১৯ খৃষ্টাব্দ পর্য্যন্ত সদর দেওয়ানী আদালতের জঞ্জ ফেণ্ডাল সাহেবের নামানুসারে লোকে মুবারক মঞ্জিলকে ফেণ্ডালবাগও কহিয়া থাকে। ভাগীরথীর অপর বা পশ্চিম কূলে অবস্থিত খোশবাগ, রোশনীবাগ, ফৰ্থবাগ ও ডাহীপাড়ার কথা আগেই উল্লিখিত হইয়াছে। ইহাদের উত্তরে জাফরাগঞ্জের ঠিক অপর পারে মোতিঝিলের অনুকরণে সিরাজ উদ্দৌলা হীরাঝিল নামে একটি সুন্দর