পাতা:বাংলায় ভ্রমণ -প্রথম খণ্ড.pdf/২৯৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পূর্ববঙ্গ রেলপথে বাংলাদেশ २br({ নিৰ্ম্মিত করিয়া আলোকমালায় সজ্জিত করা হইত ; নদীবক্ষে প্রতিফলিত হইয়া ইহার আলোক-উৎসবের সৌন্দৰ্য্য বহুগুণে বদ্ধিত করিত ; ইহা হইতেই রোশনীবাগের নামের উৎপত্তি। এক্ষণে রোশনীবাগ অন্ধকারাচ্ছন্ন। নবাব মুর্শিদ কুলী খাঁর সময় হইতে এই উৎসব চলিয়া আসিতেছে বলিয়া কথিত। ব্যারার জঁাকজমক পূর্বাপেক্ষ অনেক কমিয়া যাইলেও ইহা এখনও মুর্শিদাবাদের একটি স্মরণীয় উংসব এবং বহু স্থান হইতে এই উপলক্ষে জন সমাগম হয়। সিরাজ উদ্দৌলা ব্যারার পূর্ব বৃহস্পতিবার নাওয়ার নামে আর একটি উৎসবের প্ৰবৰ্ত্তন করেন বলিয়া কথিত। উক্ত দিবসে বৈকাল বেলায় বহু সুসজ্জিত তরণী লইয়া নদীজলে অগণিত কদম্ব ফুলের মালা ভাসাইয়া নবাব নদীবক্ষে দরবার করিতেন। এ উৎসব বন্ধ হইয়া গিয়াছে । আজ মুর্শিদাবাদের পূর্ব গৌরব ভ্রষ্ট হইলেও অতীতের বহু স্মৃতিচিহ্ন বক্ষে ধারণ করিয়া বাংলার এই পুরাতন রাজধানী শিক্ষার্থী, ভ্রমণকারী ও অনুসন্ধিৎসুর নিকট তীর্থরূপে বিরাজ করিতেছে । বন্যা নিবারণের জন্য ভাগীরথীর পূর্বকূলে ভগবানগোলা হইতে প্রায় পলাশী পর্যন্ত ললিতাকুরী বাধ নামে প্রায় ৫৭ মাইল লম্বা একটি বাধ আছে। এই বাধ সম্বন্ধে কেহ কেহ বলেন, যদিও ইহার জন্য মুর্শিদাবাদ অঞ্চল বস্তার হাত হইতে রক্ষা পায়, কিন্তু বন্যার জলের পলিমাটি হইতে বঞ্চিত হইয়া জমির উর্বর্বরা শক্তির ক্ষতি হয় এবং এই পলি নদী গর্ভে জমিয়া নদীতল উচ্চ হইয়া উঠিয়া নদী প্রবাহের বাধা সৃষ্টি করে। নশীপুর রোড-কলিকাতা হইতে ১২৫ মাইল দূর | নশীপুরে পশ্চিম দেশীয় অগ্রবাল বণিক জাতীয় এক ঘর বড় জমিদারের বাস। এই বংশ নশীপুরের রাজবংশ নামে পরিচিত। ইতিহাস প্রসিদ্ধ দেবীসিংহ এই বংশের প্রতিষ্ঠাতা। মুর্শিদাবাদের গৌরবের দিনে ভাগ্যান্বেষী দেবীসিংহ সুদূর পাণিপথ হইতে মুর্শিদাবাদে আসিয়া উপস্থিত হন । বহু চেষ্টা ও উমেদারির পর তিনি মুর্শিদাবাদের দেওয়ান মহম্মদ রেজা খার অধীনে পূৰ্ণিয়ার ইজারা ও সেই সঙ্গে উক্ত অঞ্চলের শাসনভার প্রাপ্ত হন। রাজস্ব আদায়ের জন্য তিনি যে সকল পন্থা অবলম্বন করেন, তাহা তাহার চরিত্রকে চিরদিনের জন্য কলঙ্কিত করিয়া রাখিয়াছে। হেষ্টিংস বাধা হইয়া ১৭৭২ খৃষ্টাব্দে দেবীসিংহকে পুণিয়ার কার্য্য হইতে পদচ্যুত করেন কিন্তু পরে আবার তাহাকে দিনাজপুর, রঙ্গপুর প্রভৃতি স্থানের ইজারা প্রদান করিয়া দিনাজপুরের নাবালক রাজার দেওয়ান পদে প্রেরিত করেন। তিনি পূর্ব মূৰ্ত্তি ধারণ করেন এবং উত্তর বঙ্গে প্রভূত ক্ষমতাশালী হইয় উঠেন। তাহার করভার, নিপীড়ন ও নানা অত্যাচারে অবশেষে উত্তর বঙ্গের প্রজাগণ বিদ্রোহী হয় এবং উহা দমন করিবার জন্য কোম্পানির সৈন্ত্যগণের সাহায্য লইতে হইয়াছিল। মোগলহাট, পাটগ্রাম প্রভৃতি স্থানে খণ্ডযুদ্ধ অনুষ্ঠিত হইয়াছিল। অবশেষে কর্তৃপক্ষকে দেবীসিংহের অত্যাচারের অনুসন্ধান করিতে হইয়াছিল। র্তাহার অত্যাচারে সমগ্র উত্তরবঙ্গ পরিত্রাহি ডাক ছাড়িতে থাকে। সাহিত্য সম্রাট বঙ্কিমচন্দ্র তাহার অমর উপন্যাস “দেবী চৌধুরাণী”তে