পাতা:বাংলায় ভ্রমণ -প্রথম খণ্ড.pdf/২৯৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বাংলায় ভ্রমণ جابراہی দেবীসিংহের উৎপীড়নের উজ্জল আলেখ্য অঙ্কিত করিয়াছেন এবং এতৎপ্রসঙ্গে বলিয়াছেন, “পৃথিবীর ওপারে ওয়েষ্ট মিনিষ্টার হলে দাড়াইয়া এডমণ্ড বার্ক দেবীসিংহকে অমর করিয়া গিয়াছেন । অগ্নিশিখাবং জালাময় বাক্যস্রোতে বার্ক দেবীসিংহের বিবসহ অত্যাচার অনন্তকাল সমীপে পাঠাইয়াছেন।” দেবীসিংহ নিঃসন্তান ছিলেন, স্বীয় কনিষ্ঠ ভ্রাতার দ্বিতীয় পুত্র বলবন্ত সিংহকে তিনি পোষ্যপুত্র গ্রহণ করেন। বলবন্ত সিংহের পুত্র গোপালসিংহ অপুত্রক অবস্থায় পরলোক গমন করায় দেবীসিংহের কনিষ্ঠ ভ্রাতা বাহাদুর সিংহের অপর বংশধরেরা জমিদারীর অধিকারী হন। বাহাদুর সিংহের তৃতীয় পুত্র রাজা উদ্বন্ত সিংহ বহু সৎকার্য্যের দ্বারা খ্যাতি লাভ করেন। র্তাহার সময় হইতেই নশীপুরের রাজবংশ বংশানুক্রমিক রাজা উপাধির অধিকারী। নশীপুরের রাজবাটী ও ঠাকুরবাটী এখানকার দ্রষ্টব্য বস্তু। প্রতিবৎসর মহাসমারোহের সহিত রাজবাটীতে তুলসী বিহার ও ঝুলন যাত্রা উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। ● মহিমাপুর নশীপুরের নিকটবর্তী মহিমাপুরে বিখ্যাত জগৎ শেঠবংশীয় বণিকগণের বাস। জগৎশেঠ কাহারও নাম নহে, ইহা একটি উপাধি বিশেষ। যোধপুর নিবাসী হীরানন্দ শেঠের কনিষ্ঠ পুত্র শেঠ মাণিকচাদ বাণিজ্য উপলক্ষে বাংলার তৎকালীন রাজধানী ঢাকায় একটি গদী সংস্থাপন করেন। সেই সময়ে মুশিদকুলী খ। বাংলার দেওয়ানি লাভ করিয়া ঢাকায় অবস্থান করিতেন। কাৰ্য্য উপলক্ষে মাণিকচাদের সহিত র্তাহার পরিচয় ও ক্রমশঃ ঘনিষ্ঠ সম্বন্ধ হয়। . আজিম-উস্-শানের সহিত মনোমালিন্তের ফলে মুর্শিদকুলী যখন ঢাকা ত্যাগ করিয়া মুর্শিদাবাদে আসেন, শেঠ মাণিকচাঁদও র্তাহার সহগামী হন এবং মুর্শিদাবাদের নিকটবর্তী ভাগীরথীর পূর্বকূলে মহিমাপুরে নিজের বাসভবন নিৰ্ম্মাণ করেন। ইহার দত্তকপুত্র ফতেচাদ বাদশাহ মহম্মদশাহের নিকট হইতে “জগৎশেঠ” উপাধি লাভ করেন। মুর্শিদকুলীর সহিত সংস্রবের ফলে শেঠবংশ ক্রমে ক্রমে রাজ্য পরিচালনা বিষয়েও প্রাধান্ত লাভ করেন। বাংলার রাজস্ব দিল্লীর রাজকোষে শেঠদিগের হুঞ্জী মারফত প্রেরিত হইত। দিল্লীতে র্তাহাদের আত্মীয়দের গদীতে তেওঁী ভাঙ্গান হইত। শেঠ বংশের ঐশ্বৰ্য্যের কথা প্রবাদের ন্যায় লোকের মুখে মুখে ফিরিত। সারা হিন্দুস্থানে র্তাহাদের সমকক্ষ কেহ ছিল না। কথিত আছে যে তাহাদের গদীতে দশ কোটী টাকার কারবার চলিত। নবাব আলিবর্দীর সময়ে মহারাষ্ট্রীয়গণ র্তাহাদের গদী লুণ্ঠন করিয়া দুই কোটা টাকা লুণ্ঠন করিলেও তাছাদের কিছুই ক্ষতি হয় নাই। পরবর্তীকালে নবাব সিরাজ উদ্দৌলার সহিত কোন কারণে শেঠবংশের মনোমালিন্ত ঘটে এবং সিরাজের সিংহাসনচ্যুতির ষড়যন্ত্রে তৎকালীন জগৎশেঠ মহাতাপচাদ বিশেষ অংশ গ্রহণ করেন। নানারূপ ঘটনাচক্রে ও কালবশে জগৎ শেঠদিগের বিপুল বিত্ত ক্ষয়প্রাপ্ত হইতে থাকে এবং ইংরেজ আমলে তাহাদের অবস্থা ক্রমশঃ অবনতির দিকে যায়। এই বংশীয় ইন্দ্রর্চাদ ইংরেজ সরকারের নিকট হইতে (লর্ড কর্ণওয়ালিশের শাসনকালে ) শেষ “জগৎশেঠ” উপাধি লাভ করেন। অবশেষে এই বংশীয়গণের এইরূপ হীনাবস্থা হয় যে ইহার কয়েক পুরুষ যাবত ইংরেজ প্রদত্ত বৃত্তির উপর নির্ভর করিতে বাধ্য হন। জগৎশেঠগণের বিস্তৃত বাসভবনের অধিকাংশ গঙ্গার গর্ভসাৎ হইয়াছে। ঠাকুরবাটার প্রাঙ্গনে কয়েকটি সুন্দর কারুকার্য্যমণ্ডিত প্রস্তরখণ্ড অতীতের গৌরবময় স্মৃতি বহন করিতেছে ।