পাতা:বাংলায় ভ্রমণ -প্রথম খণ্ড.pdf/২৯৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পূর্ববঙ্গ রেলপথে বাংলাদেশ २४१ শেঠবংশ জৈন হইলেও, বহুকাল পূর্ব হইতে ইহারা বৈষ্ণব ধৰ্ম্ম অবলম্বন করেন। পুনরায় র্তাহারা জৈন ধৰ্ম্ম গ্রহণ করিয়াছেন। শেঠদিগের বাটীর উত্তরে সতীচোরা বা সতীস্থান নামে একটা মন্দির দৃষ্ট হয়। এই স্থানে কোন ও সতী সহমৃত হওয়ায় মন্দিরটি নিৰ্ম্মিত হয়। জিয়াগঞ্জ-কলিকাতা হইতে ১২৭ মাইল দূর। ভাগীরতীর পূর্ব তীরে অবস্থিত ইহা একটি পুরাতন স্থান। জিয়াগঞ্জ ও গঙ্গার পশ্চিম তীরে অবস্থিত আজিমগঞ্জ প্রভৃতি স্থানে নওলাক্ষা, ধোরিয়া, কোঠারি ও নাহার প্রভৃতি উপাধিধারী বহু জৈন বণিকের বাস। মুর্শিদাবাদের উন্নতির সময়ে পশ্চিমদেশ হইতে আসিয়া এই বণিকগণ বাংলায় স্থায়ীভাবে বসবাস করিয়াছিলেন । ইহাদের নিৰ্ম্মিত জৈন মন্দিরগুলি এতদঞ্চলের দ্রষ্টব্য বস্তু। জিয়াগঞ্জ আজিমগঞ্জ মিউনিসিপ্যালিটির অন্তর্গত । জিয়াগঞ্জের প্রাচীন নাম গাম্ভীলা । বিন্ধ্যাচলের প্রধান পাণ্ড গোসাইএর বংশীয় “ জিয়া” নামক জনৈকা বৃদ্ধ এখানে আসিয়া ভাগীরথী তীরে বাস করেন। তাহার অনুরক্ত বণিকগণ র্তাহার নাম অনুসারে এই স্থানের গাম্ভীলা নাম পরিবর্তন করিয়া জিয়াগঞ্জ নাম রাখেন। গাম্ভীলা বৈষ্ণবগণের নিকট প্রিয় স্থান। নরোত্তম দাস ঠাকুরের শিষ্য মহাপণ্ডিত গঙ্গানারায়ণ চক্রবর্তী গাম্ভীলায় বাস করিতেন। এই স্থানেই নরোত্তম গঙ্গানারায়ণের প্রার্থনা অনুসারে চিত শয্যা হইতে উঠিয়া আসিয়াছিলেন (“খেতুর রোড" দ্রষ্টব্য )। এই গাম্ভীলা পাটেই অতি অদ্ভূতভাবে নরোত্তমের অন্তর্ধান ঘটে । এ সম্বন্ধে “নরোত্তম বিলাসে" উল্লিখিত হইয়াছে। “বুধরি হইতে শীঘ্ৰ চলিলা গাম্ভীলে। গঙ্গা স্নান করিয়া বসিলা গঙ্গা কুলে। আজ্ঞা কৈল রামকৃষ্ণ গঙ্গানারায়ণে । মোর অঙ্গ মার্জন করহ কুইজনে ॥ দোহে কিবা মার্জন করিব পরশিতে ॥ দুগ্ধ প্রায় মিশাইল গঙ্গার জলেতে ॥" ১৫০৯ শকাব্দে কোজাগর লক্ষ্মীপূজার পরবত্তী পঞ্চমী তিথিতে ঠাকুর নরোত্তমের তিরোভাব ঘটে ৷ আজিও প্রতিবৎসর এই দিনে জিয়াগঞ্জে র্তাহার তিরোভাব মহোৎসব উপলক্ষে মেলা হইয়া থাকে। প্রায় ৩০-৩৫ বৎসর পূৰ্ব্বে গাম্ভীলার মেলায় নরোত্তম ঠাকুরের মৃন্ময়ী মূৰ্ত্তি বিক্রয় হইত। জিয়াগঞ্জ নিবাসী জনৈক ভদ্রলোক সম্প্রতি এইরূপ একটি মূৰ্ত্তি কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়স্থ "আশুতোষ স্মৃতি চিত্রশালায়" উপহার প্রদান করিয়াছেন। এই মূৰ্ত্তিটি নরোত্তম দাসের সন্ন্যাস অবস্থার। মূৰ্ত্তিটি হাটু গাড়িয়া উপবিষ্ট ও যুক্তহস্ত। চোখ দুটি ভাব বিহ্বল, দেহ দীর্ঘাকার, নাসিক উন্নত, বক্ষ প্রশস্ত, নস্তকের কেশরাশি চুড়ারূপে বদ্ধ, মুখমণ্ডল গুম্ফ ও শ্মশ্রতে প্রায় সমাচ্ছন্ন, অঙ্গের বর্ণ। সুবৰ্ণ কান্তি, পরিধানে রক্ত কৌলীন ও সর্বাঙ্গে হরিনামের তিলক। মূৰ্ত্তিটির কারুকার্য্য গতি সুন্দর। জিয়াগঞ্জের নিকটবৰ্ত্তী কুমার পাড়া গ্রামের কুমারগণ এইরূপ মূৰ্ত্তি প্রস্তুত করিয়া গাম্ভীলার মেলায় বিক্রয় করিত।