পাতা:বাংলায় ভ্রমণ -প্রথম খণ্ড.pdf/৩০০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Svbr বাংলায় ভ্রমণ জিয়াগঞ্জের নিকটবর্তী সাধকবাগ অপর একটি দ্রষ্টব্য বস্তু। এখানে মস্তরাম সাধুর আখড়া অবস্থিত। মস্তরামের প্রকৃত নাম সদানন্দ । তিনি শারীরিক ও যৌগিক শক্তির জন্য সুপ্রসিদ্ধ ছিলেন। পায়ে হাটিয়া তিনি ভাগীরথী পারাপার হইতেন বলিয়া প্রবাদ। তিনি মুর্শিদকুলী খাঁ, আলিবন্দী ও নবাব সিরাজউদ্দৌলার সমসাময়িক ব্যক্তি। কথিত আছে, একবার নবাব আলিবর্দী তাহাকে একখানি শাল ও কতকগুলি স্বর্ণমুদ্রা উপঢৌকন পাঠাইয়া দেন। উহা প্রাপ্তিমাত্র তিনি শাল খানিকে সম্মুখস্থ অগ্নিকুণ্ডের মধ্যে ও মুদ্রাগুলিকে নদীর জলে ফেলিয়া দেন। এই সংবাদ শুনিয়া আলিবর্দী অত্যন্ত ক্রুদ্ধ হইয়া প্রেরিত দ্রব্যগুলি ফেরত চাহিয়া পাঠান। মস্তরাম তৎক্ষণাৎ অগ্নিকুণ্ড হইতে সেইরূপ দশখানি শাল ও নদীর জল হইতে প্রায় পঞ্চগুণ স্বর্ণমুদ্রা তুলিয়া দিয়া নবাবের বিস্ময় উৎপাদন করেন। আলিবর্দী তাহার অদ্ভূত ক্ষমতা দেখিয়া মুগ্ধ হন এবং তাহাকে একখানি ঢাল ও তরবারি উপহার দেন। আলিবন্দী প্রদত্ত ঢাল ও তরবারি এখনও সাধকবাগের আশ্রমে দেখিতে পাওয়া যায়। নাটোরের মহারাণী ভবানী, বড়নগরের রাজা উদয়নারায়ণ ও মহিষাদলের রাজা প্রভৃতি তৎকালীন শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিগণ মস্তরামের একান্ত অনুগত ছিলেন। মস্তরাম বাবাজীর খড়ম, যষ্টি ও ব্যবহৃত কয়েকটি অলঙ্কার সাধকবাগে সযত্নে রক্ষিত রহিয়াছে। রোগ আরোগ্য কামনায় ও বিপদ হইতে উদ্ধার পাইবার আশায় এখনও বহু ব্যক্তি এই আখড়ায় পূজা দিয়া থাকেন। রথযাত্রা উপলক্ষে আখড়ায় সমারোহে উৎসব হইয়া থাকে। সাধকবাগের অপরপারে ভাগীরথীর পশ্চিমকুলে বড়নগর অবস্থিত। পূর্বভারত রেলপথের ব্যাণ্ডেল বারহাড়োয় শাখার “আজিমগঞ্জ জংশন” স্টেশন দ্রষ্টব্য। ভগবানগেলা—কলিকাতা হইতে ১৩৪ মাইল। বৰ্ত্তমানে ইহা একটি নগণ্য পল্লী হইলেও এক সময়ে বাংলা দেশের একটি বিখ্যাত বন্দর ছিল । বৰ্ত্তমান ভগবান গোলা রেল স্টেশন হইতে পুরাতন ভগবানগোলা প্রায় ৪ মাইল দূর। ইহার একদিকে ভাগীরথী, অপর দিকে জলঙ্গী ও নিকটেই পদ্মা প্রবাহিত হইত। দেশ বিদেশ হইতে আগত বাণিজ্য তরীতে ভগবান গোলা তখন সুশোভিত থাকিত। মুর্শিদাবাদের অভু্যদয়ের সময়ে ইহার অত্যন্ত শ্ৰীবৃদ্ধি হয়। ঐতিহাসিক হলওয়েল লিখিয়াছেন তৎকালে ভগবানগোলায় ধান্ত, দাইল, পলাণ্ডু প্রভৃতি শস্য, তুলা, রেশম, বস্ত্র, নীল, ঘৃত, তৈল প্রভৃতি ব্যবসায়ের একটি বৃহৎ কেন্দ্র ছিল এবং এই গঞ্জ হইতে বার্ষিক ৩০ লক্ষ টাকার কর উঠিত। এত বড় বাজার তৎকালে পৃথিবীর আর কোথাও ছিল কিনা সন্দেহ । শোভাসিংএর বিদ্রোহ কালে র্তাহার সহযোগী রহিম খার সহিত ১৬৯৭ খৃষ্টাব্দে ভগবানগোলায় মুঘল পক্ষীয় জবরদস্ত খার ভীষণ যুদ্ধ হয়। বিদ্রোহীরা পরাজিত হইয়া বৰ্দ্ধমানের দিকে পলাইয়া যায়। নবাব আলীবর্দী খার রাজত্ব কালে মহারাষ্ট্রীয় বগীগণের আক্রমণ হইতে রক্ষা করিবার জন্ত নদীতীর ব্যতীত ভগবানগোলার অন্যান্ত দিকে পরিখ খনিত ও কাষ্ঠের প্রাচীর নিৰ্ম্মিত হইয়াছিল এবং এই স্থানে নবাবের নৌ সেনা আডড ছিল। ভাস্কর পণ্ডিত ও অলিভাইএর নেতৃত্বে মহরাষ্ট্রীয়গণ চারিবার ভগবান গোলা আক্রমণ করিয়া প্রতিহত হয়। অতঃপর ১৭৫০ খৃষ্টাব্দে বগীগণ পুনরায়