পাতা:বাংলায় ভ্রমণ -প্রথম খণ্ড.pdf/৩০১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পূর্ববঙ্গ রেলপথে বাংলাদেশ వbrసె এই স্থান আক্রমণ করে ও নগর মধ্যে প্রবেশ করিয়া ধনরত্ন লুণ্ঠন ও গুহে অগ্নি সংযোগ করিয়া চলিয়া যায়। পুরাতন আমলের কতকগুলি পরিখার চিহ্ন ছাড়া বৰ্ত্তমানে ভগবানগোলায় বিশেষ দ্রষ্টব্য অন্য কিছুই নাই । পলাশীর যুদ্ধে পরাজিত হইয়া সিরাজ উদ্দৌলা যখন মুর্শিদাবাদ হইতে পলায়ন করেন, তখন এই ভগবানগোলা হইতেই নৌকা যোগে রাজমহল অভিমুখে যাত্রা করেন। ১৮২৪ খৃষ্টাব্দে বিশপ হীবার এই স্থান দেখিয়া মুগ্ধ হইয়াছিলেন এবং র্তাহার ভ্রমণ বিবরণীতে ইহার শান্ত শু্যামল পল্লীশ্রীর কথা উল্লেখ করিয়াছেন এবং তাহ লইয়া একটি কবিতাও রচনা করিয়াছিলেন। ভগবানগোলার নিকটবৰ্ত্ত তেলিয়া বৃধুরি গ্রাম বৈষ্ণব সাহিত্যে স্থপরিচিত। প্রসিদ্ধ বৈষ্ণব ভক্ত রামচন্দ্র কবিরাজ ও তদীয় অনুজ বিখ্যাত পদকৰ্ত্তা গোবিন্দ দাস এই গ্রামের অধিবাসী ছিলেন । ইহারা উভয় ভ্রাতাই সুপ্ৰসিদ্ধ শ্ৰীনিবাস আচার্যের শিষ্য। রামচন্দ্র কবিরাজ নরোত্তম দাসের বিশেষ অন্তরঙ্গ বন্ধু ছিলেন। স্বকৃত পদে নরোত্তম দাস বহু স্থানে রামচন্দ্রের নাম উল্লেখ করিয়াছেন । রামচন্দ্রের ভ্রাতা গোবিন্দ কবিরাজ প্রথমে ঘোর শাক্ত ছিলেন। শ্ৰীনিবাস আচার্য্যের কৃপায় দুরারোগ্য ব্যাধি হইতে মুক্তি লাভ করিয়া তিনি র্তাহার শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন। এই সময়ে তেলিয়া বুধুরী গ্রামে শ্ৰীনিবাস আচার্য্য আসিলে একটি মহোৎসবের অনুষ্ঠান হয় । গোবিন্দ দাসের রচিত পদাবলী বাংলা সাহিত্যের বিশিষ্ট সম্পদ । ভগবানগোলার নিকটস্থ বিল সমূহে মোতিঝিলের হ্যায় অল্প মূল্যের মুক্ত পাওয়া যায় । লালগোল—কলিকাতা হইতে ১৪১ মাইল দূর। ইহা মুর্শিদাবাদ জেলার মধ্যে একটি বিখ্যাত স্থান। এখানে রাজা উপাধিধারী একঘর পশ্চিম দেশীয় জমিদারের বাস। আচারে ব্যবহারে এই বংশ এখন পুরাপুরি বাঙালী হইয়া গিয়াছেন। এই রাজবংশের বহু কীৰ্ত্তি মুর্শিদাবাদের নানা স্থানে দেখিতে পাওয়া যায়। এই বংশ বাংলা সাহিত্যের পৃষ্ঠপোষক ও সাহিত্য সেবিগণের বিশেষ উৎসাহ দাতা । প্রতিবৎসর মহাসমারোহে লালগোলায় রথযাত্রা উৎসব অনুষ্ঠিত হইয়া থাকে। লালগোলা হইতে ৪ মাইল দূরে পদ্মার তীরে লালগোলাঘাট স্টেশন । এই স্থান হইতে রেলের খেয়া-স্টীমারে করিয়া প্রায় আট মাইল দূরবত্তী পদ্মা ও মহানন্দার সঙ্গমের নিকট অবস্থিত রাজশাহী জেলার অন্তর্গত গোদাগাড়ীঘাটে গিয়া মাঝারি মাপের লাইনের গাড়ীতে উঠিয়া মালদহ ও কাটিহার যাইতে হয়। লালগোলাঘাটের দৃশু অতি সুন্দর, বশেষতঃ বর্ষাকালে পদ্মার গৈরিক জলোচ্ছাসে যখন পদ্মা ও মহানন্দার মধ্যবৰ্ত্ত বিস্তীর্ণ রভূমি জলে ডুবিয়া যায়, তখনকার দৃশ্ব আরও স্বন্দর। পদ্মার তীরে অবস্থিত বলিয়া লালগোলাঘাট স্টেশনটিকে প্রায় প্রতি বৎসরই বিভিন্ন স্থানে সরাইয়া লইতে হয়। সেই জন্য স্টেশনের অফিস প্রভৃতি পদ্মা মধ্যবৰ্ত্তী একখানি বড় ফ্রাটের উপর অবস্থিত। 19