পাতা:বাংলায় ভ্রমণ -প্রথম খণ্ড.pdf/৩৩৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পূর্ববঙ্গ রেলপথে বাংলাদেশ ৩২১ উপরোক্ত সেতু হইতে দুই মাইল উত্তরে বিশাল আদিনা মসজিদ অবস্থিত। ইহার তিন দিকের ছাদ ও গুম্বজ পড়িয়া গিয়াছে, কিন্তু পশ্চিম দিকের ধ্বংসাবশেষ এখনও সগৰ্ব্বে আত্মপরিচয় প্রদান করিতেছে। ইহা হুগলীর ইমামবাড়া ও মুর্শিদাবাদের কাটরা মসজিদ অপেক্ষাও বড়। মসজিদটি ৫০০ ফুট লম্বা ও ৩০০ ফুট চওড়া এবং ৬০ ফুট উচ্চ। এরূপ বিশাল মসজিদ ভারতের অন্য কোথাও আর নিৰ্ম্মিত হয় নাই এবং পৃথিবীতেও খুব অল্পই আছে। ফারগুসানের মতে দামাস্কাসের প্রসিদ্ধ ও বিরাট জুম্মা মসজিদের মাপে ও অবিকল অনুকরণে এই মসজিদটি নিৰ্ম্মিত হইয়াছে। ইহা বাংলার মুসলমান যুগের স্থাপত্য শিল্পের সর্বশ্রেষ্ঠ নিদর্শন। মসজিদের মধ্যে একটি কষ্টি প্রস্তর-মণ্ডিত বৃহৎ প্রকোষ্ঠ দেখিতে পাওয়া যায়। ঐ স্থানে আচাৰ্য্য উপাসনা করিতেন। উপাসনার বেদীটি কৃষ্ণপ্রস্তর নিৰ্ম্মিত, দেখিতে ঠিক হিন্দু মন্দির বা রথের মত। ইহা যে পূৰ্ব্বে হিন্দু মন্দিরের অংশ ছিল তাহাতে সন্দেহ নাই। আর একটি সুবৃহৎ ব্যারাকের ন্যায় কক্ষের ধ্বংসাবশেষ দেখা যায়—ঐ স্থানে সহস্ৰাধিক লোক একত্র নমাজ করিতে পারিত । 4. মসজিদের কয়েকটি ধ্বংসাবশিষ্ট কক্ষের প্রবেশদ্বারের কষ্টি প্রস্তরের চৌকাটে লতা পুষ্প সপাদি চিত্রাঙ্কত সুন্দর কারুকাৰ্য্য এখনও দর্শকের দৃষ্টি আকর্ষণ করিয়া থাকে। এগুলিও পুৰ্ব্বে হিন্দু মন্দিরের অঙ্গ ছিল। মসজিদের অভ্যন্তর পাথরের থাম ও ইটের দেওয়াল দিয়া ১২৭টি সমভূজে বিভক্ত ছিল এবং প্রত্যেকের উপর একটি করিয়া গুম্বজ ছিল । মসজিদের মধ্যে উপাসনা প্রকোষ্ঠ আংশিক দ্বিতল এবং ইহাতে বাদশাহের (অর্থাৎ বাংলার সুলতানের) বসিবার স্থান ছিল ; বাদশাহ ঐ স্থানে গুপ্ত পথ দিয়া আসিতেন। ঐ স্থানের নাম বাদশাহকী তখৎ । কেহ কেহ বলেন এখানে বেগমের নমাজ পড়িতেন । আহমেদাবাদের মসজিদগুলিতে এইরূপ তখং দেখিতে পাওয়া যায়। মসজিদের অধিকাংশ স্তম্ভ, মিনার গুম্বজাদি পড়িয়া গিয়াছে, তবুও যাহা অবশিষ্ট আছে তাহা দেখিবার জিনিষ। কোন কোন গোলাকার প্রস্তরস্তম্ভ এত মসৃণ যে উহার মধ্যে দর্পণের ন্যায় মুখ দেখা যায়। কোন কোন কক্ষপ্রাচীর কষ্টিপ্রস্তর দ্বারা উৰ্দ্ধ হইতে অধঃ পর্য্যন্ত মণ্ডিত। কক্ষপ্রাচীর গাত্রে তোগর অক্ষরে কোরাণের বয়েত লিখিত আছে,-মৰ্ত্তবাসি! তোমরা মাথা নামাইয়া ভূমিতে লুষ্ঠিত হইয়া আল্লাহর উপাসনা কর। স্থানীয় ব্যক্তিগণের মুখে শুনা যায়, পূর্বে এখানে “আদিনাথ” নামক এক শিবলিঙ্গ প্রতিষ্ঠিত ছিলেন এবং “আদিনা” নামটি “আদিনাথ” নামেরই অপভ্রংশ। এই কিংবদন্তীর বলে কিছুদিন পূৰ্ব্বে স্থানীয় সাওতালগণ এই মসজিদ অধিকার করিবার প্রচেষ্টা করিয়াছিল; কিন্তু গভর্ণমেণ্ট উহাদিগকে নিবৃত্ত করেন। উপাসনার বেদীর উপর উঠিরার সোপানে ছয়টি ধাপ আছে, উহার মধ্যে সৰ্ব্বোচ্চ ধাপের গাত্রে একটি মুত্ত্বির ভগ্নাবশেষ গ্রথিত আছে। ঐটি কোনও হিন্দু দেবমূৰ্ত্তি হইবে। মসজিদের গাত্রের প্রস্তরগুলিতেও কোথাও কোথাও হিন্দুর গণেশাদি দেবতার মূৰ্ত্তি খোদিত আছে দেখিত্ত্বে