পাতা:বাংলায় ভ্রমণ -প্রথম খণ্ড.pdf/৫৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8や বাংলায় ভ্রমণ যে র্তাহার মৃত্যু অবধারিত। তখন কালু ঘোষকে তিনি উপদেশ দিলেন যে সে যেন র্তাহার মৃত দেহ হাড়োয়ায় আনিয়া সমাধি দেয়। গোড়াই গাজীর হাড় হইতে স্থানের নাম হাড়োয় হইয়াছে বলিয়া কেহ কেহ অনুমান করেন। কালু ঘোষ হিন্দু হইয়াও একজন মুসলমানকে কবর দিয়াছিল এই অপরাধে তাহার জনৈক প্রতিবেশী তাহাকে প্রায়ই ঠাট্টা বিক্রপ করিত। ইহাতে ক্রুদ্ধ হইয়া কালু ঘোষ একদিন তাহাকে হত্যা করিয়া ফেলিল। নরহত্যার অপরাধে ধৃত হইয়া কালু ঘোষ গৌড়ের শাসনকৰ্ত্তা আলাউদ্দীনের নিকট নীত হইলে তাহার স্ত্রী পীর গোরাচাদের সমাধির পার্শ্বে বসিয়া ক্ৰন্দন করিতে থাকে। কথিত আছে পীর গোরাচাদ কবর হইতে উঠিয়া গৌড়ে গমন করেন এবং কালু ঘোষকে মুক্তি দিবার জন্য আলাউদ্দীনকে অনুরোধ করেন। এই অস্তৃত ব্যাপার প্রত্যক্ষ করিয়া আলাউদ্দীন অত্যন্ত বিম্মিত হন এবং কালু ঘোষকে মুক্তি দেন। অতঃপর তিনি গোরাচাদের সমাধির উপর একটি মসজিদ নিৰ্ম্মাণ করিয়া দেন এবং ১৫০০ বিঘা নিষ্কর জমি দান করেন। কালু ঘোষের বংশধরগণ বহুকাল ধরিয়া এই সমাধির সেবায়েত ছিল । বৰ্ত্তমানে এই বংশের অস্তিত্ব নাই। বাংলা দেশের নানা স্থানে পর গোরাচাদের আস্তান দেখিতে পাওয়া যায়। দেগঙ্গা-বা দ্বিগঙ্গ কলিকাতা হইতে ২১ মাইল দূর। ইহা একটি প্রাচীন স্থান। অনেকে অনুমান করেন যে প্রাচীন গ্রীক ইতিহাস পেরিপ্লাসে উল্লিখিত গঙ্গে বা গঙ্গারেজিয়া নগরী এই স্থানেই অবস্থিত ছিল। দেগঙ্গা শব্দটি দেবগঙ্গা, দ্বীপগঙ্গা অথবা দীর্ঘগঙ্গ শব্দের অপভ্রংশ। দেগঙ্গার নিকটে বহুবিস্তৃত ধ্বংসস্তৃপ ও প্রাচীন দীর্ঘকা ইত্যাদি দৃষ্ট হয় । ইহা দেউলিয়ার রাজা চন্দ্রকেতুর রাজধানীর ধ্বংসাবশেষ বলিয়া কথিত। চন্দ্রকেতুর সহিত গোড়াই গাজীর সংঘর্ষের কথা পূর্বেই উল্লিখিত হইয়াছে। চন্দ্রকেতুকে পরাস্ত করিতে না পারিয়া গোড়াই গাজী গৌড়ের বাদশাহের সহায়তা প্রার্থনা করেন। বাদশাহ পীরশাহ নামক জনৈক ব্যক্তিকে বালাগু পরগণার শাসনকৰ্ত্তা নিযুক্ত করিয়া পাঠান। পরশাহ আসিয়াই গোড়াই গাজীর পরামর্শমত চন্দ্রকেতুকে মুসলমান ধৰ্ম্ম গ্রহণ করিবার জন্য পীড়াপীড়ি করিতে থাকেন। চন্দ্রকেতু এই প্রস্তাব উপেক্ষ করেন। তখন পীরশাহের সহিত তাহর তুমুল যুদ্ধ উপস্থিত হয়। এই যুদ্ধে চন্দ্রকেতু জয়লাভ করেন, কিন্তু ঘটনাক্রমে তাহার বিজয়ের বার্তাবাহী শ্বেত পারাবতের পরিবর্তে পরাজয়ের নিদর্শন কৃষ্ণ পারাবত উড়িয়া অন্তঃপুর অভিমুখে গমন করে। যুদ্ধে চন্দ্রকেতু পরাস্ত হইয়াছেন মনে করিয়া অন্তঃপুরবাসিনীর দীঘিতে ডুবিয়া আত্মমৰ্য্যাদা রক্ষা করেন। বিজয়ী চন্দ্রকেতু গৃহে ফিরিয়া এই শোচনীয় ঘটনায় ক্ষুব্ধ হইয়া নিজেও আত্মহত্যা করেন। পারাবত বিভ্রাটের ফলে সেকালের বহু রাজবংশের এইভাবে ধ্বংস হওয়ার কাহিনী অবগত হওয়া যায়। রাজার যুদ্ধযাত্রার সময়ে একটি শ্বেত ও একটি কৃষ্ণ কবুতর সঙ্গে লইয়া যাইতেন । শ্বেত কবুতরটি জয়ের ও কৃষ্ণ কবুতরটি পরাজয়ের বার্তাবহরূপে গণ্য হইত। যখন যুদ্ধজয়ের আর কোনই আশা থাকিত না তখন রাজার নির্দেশক্রমে তাহার কোন প্রিয় অনুচর কৃষ্ণ কবুতরটিকে ছাড়িয়া দিত। শিক্ষিত কবুতর উড়িয়া অন্তঃপুরে আগমন করিলে রাণী ও অন্যান্য পুরবাসিনীগণ সাধারণতঃ নিকটবর্তী কোন দীর্ঘকায় ডুবিয়া মরিয়া অত্যাচারীগণের হাত হইতে নিজেদের সন্ত্রম রক্ষা করিতেন ।