পাতা:বাংলায় ভ্রমণ -প্রথম খণ্ড.pdf/৬৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

হাওড়া-আমতা ও শিয়াখাল লাইট রেলওয়ে 6 & পাঠান আমলে ভূরিশ্রেষ্ঠ রাজ্য সম্পূর্ণ স্বাধীন ছিল। মুঘলযুগে সম্রাট আকবরের সময় ইহা নামে মুঘল সাম্রাজ্যের অধীন হইলেও কাৰ্য্যতঃ স্বাধীনষ্ট ছিল। তৎকালে মুঘল দরবারে ভূরিশ্রেষ্ঠ-রাজকে বার্ষিক একটি স্বর্ণমুদ্র, একটি ছাগল ও একখানি কম্বল রাজকর স্বরূপ দিতে হইত। সম্রাট আকবরের সময়ে ভূরিশ্রেষ্ঠরাজ রুদ্রনারায়ণ রায়ের মৃত্যুর পর তাহার বিধবা পত্নী রাণী ভবশঙ্করী ভূরিশ্রেষ্ঠের অধিশ্বরী হন। তিনি অতি তেজস্বিনী মহিলা ছিলেন। মুঘল অধিকার হইতে পাঠান সাম্রাজ্যের উদ্ধার সাধনের জন্য পাঠান সর্দার ওসমান রাণী ভবশঙ্করীকে সসৈন্তে পাঠানদলে যোগদান করিতে অনুরোধ করেন। তিনি ইহাতে অস্বীকৃত হইলে ওসমান বহু সৈন্য সামন্ত লইয়া রাত্রির অন্ধকারে অতকিতে গড়ভবানীপুর হইতে প্রায় ১৪১৫ মাইল দূরবর্তী বাসডিঙ্গ গড়ের দেবমন্দির আক্রমণ করেন। ওসমান পূৰ্ব্ব হইতেই খবর পাইয়াছিলেন যে সেদিন অমাবস্যার রাত্রিতে রাণী ভবশঙ্করী তথাকার দেব মন্দিরে পূজা দিতে গিয়াছিলেন। অতি অল্পসংখ্যক দেহরক্ষী সৈন্তোর সহায়তায় রাণী ভবশঙ্করী অশ্বপুষ্ঠে আরূঢ়া হইয়া স্বয়ং রণক্ষেত্রে অবতীর্ণ হন এবং অমিত বিক্রমে পাঠান বাহিনীকে বিধ্বস্ত ও বিতাড়িত করেন। গুণগ্ৰাহী সম্রাট আকবরের কর্ণে এই সংবাদ পৌছিলে তিনি রাণী ভবশঙ্করীর অপূৰ্ব্ব বীর্যবিত্তায় মুগ্ধ হইয়া তাঙ্গকে “রায় বাঘিনী” উপাধি প্ৰদান করেন । । কেহ কেহ বলেন যে হিন্দু মন্দির ধ্বংসকারী ইতিহাসবিশ্রুত কালাপাহাড় ভূরিশ্রেষ্ঠ রাজকুল সস্তৃত ছিলেন। তাহার নাম ছিল রাজীবলোচন রায় এবং তিনি ভূরিশ্ৰেষ্ঠরাজ রুদ্রনারায়ণের সেনাপতি ছিলেন। পাঠান নবাব স্থলেমান কররানি সপ্তগ্রাম আক্রমণ করিলে মহাবীর রাজীবলোচন ওড়িষ্যারাজ মুকুন্দদেব ও ভূরিশ্রেষ্ঠরাজ রুদ্রনারায়ণ রায়ের সেনাবাহিনী লইয়া তাহাকে পরাজিত করেন । সুলেমান সন্ধি করিতে বাধা হন । রাজীবলোচনের বীরত্বে মুগ্ধ হইয়া তিনি তাহাকে গৌড়ে আমন্ত্রণ করিয়া লইয়া যান। সেখানেও রাজীবলোচন অদ্ভূত বীরত্বের পরিচয় প্রদান করেন। একদিন পশুশালার পিঞ্জর হইতে একটি বাস্ত্র কোনরূপে বাহির হইয়া পড়ে। রাজীবলোচন উহাকে ধরিয়া পুনরায় পিঞ্জরের মধ্যে প্রবেশ করান। তাহার সৌন্দর্য ও বীরত্বে মুগ্ধ হইয়া নবাবকস্তা তাহার প্রেমে পড়েন। বহু ইতস্ততঃ করিয়া রাজীবলোচন অবশেষে তাহাকে বিবাহ করেন। হিন্দু হইয়া মুসলমান কন্যাকে বিবাহ করায় রাজীবলোচন স্বসমাজ কর্তৃক অপমানিত ও ধিক্কত হন। ইহাতে ক্ষুব্ধ হইয়া তিনি মুসলমান ধৰ্ম্মে দীক্ষিত হন এবং দারুণ হিন্দু বিদ্বেষী হইয়া পড়েন। সুলেমানের সেনা বাহিনী লইয়া তিনি ওড়িষ্যা জয় করেন এবং তথাকার বহু দেবমন্দির কলুষিত ও দেববিগ্রহ চূর্ণ বিচূর্ণ করেন। কথিত আছে যে র্তাহার ভয়ে পাণ্ডাগণ জগন্নাথ দেবকে লইয়া চিল্কা হ্রদের মধ্যে লুকাইয়া রাখেন। তিনি চিল্কা হইতে জগন্নাথ বিগ্রহকে খুজিয়া বাহির করিয়া ত্রিবেণীতে আনিয়া উহাতে অগ্নি সংযোগ করেন এবং গঙ্গার জলে ফেলিয়া দেন। সেই অদ্ধদগ্ধ কাষ্ঠখণ্ড উদ্ধার করিয়া পরে জগন্নাথ দেবের নূতন বিগ্রহ নিৰ্ম্মাণ করা হয়। কালাপাহাড় পূৰ্ব্ব দিকে কামরূপ কামাখ্যা পর্য্যন্ত অভিযান করিয়াছিলেন । দেশের বহু স্থানে বহু অঙ্গচীন দেববিগ্রহ কালাপাহাড়ী অত্যাচারের স্মৃতি বহন করিতেছে। কথিত আছে কেবল মাত্র তাহাৰু জন্মভূমি ভূরিশ্রেষ্ঠ রাজ্য র্তাহার এই অত্যাচার হইতে রক্ষা পাইয়াছিল।