পাতা:বাংলায় ভ্রমণ -প্রথম খণ্ড.pdf/৮৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

१९ বাংলায় ভ্রমণ প্রেরণ করা হয়। এই সময়ে গুজব রটে যে ব্রহ্মযুদ্ধে যোগদানের জন্য সিপাহীগণকে জাহাজে করিয়া কালাপানি (বঙ্গোপসাগর) পার করা হইবে । সিপাহীগণের মধ্যে ব্রাহ্মণ ও উচ্চবর্ণের বহু হিন্দু ছিল। এই সংবাদ বারাকপুরে রাষ্ট্র হইবামাত্র তথাকার সিপাহীরা সমূদ্র পার হইলে জাতি যাইবে, এই আশঙ্কায় বিচলিত হইয় উঠে এবং ৩০এ অক্টোবর রাত্রে প্রকাশ্ব ভাবে বিদ্রোহ ঘোষণা করে। বন্দুক ও কামানের গুলিতে ইহাদের মধ্যে অনেকে প্রাণত্যাগ করে এবং বিদ্রোহের নায়কগণকে ফাঁসি দেওয়া হয় । এই বিদ্রোহ ১৮৫৭ খৃষ্টাব্দের সিপাহী বিদ্রোহের নায় ভারতব্যাপী অশান্তির স্বষ্টি করে নাই। ১৮৫৭ খৃষ্টাব্দের বিখ্যাত সিপাহী বিদ্রোহও সৰ্ব্ব প্রথম বারাকপুরে আত্মপ্রকাশ করে। সেই সময়ে এখানে চারিটি ভারতীয় রেজিমেণ্ট বা সেনাবাহিনী ছিল । একদিন বারুদখানার একজন নিম্ন জাতীয় খালাসী জনৈক উচ্চবর্ণের সিপাহীর লোট হইতে জল পান করিতে চাহিলে সে আপত্তি করিয়া বলে যে, নীচ জাতির সংস্পর্শে তাহার লোটা অপবিত্র হইয়া যাইবে । ইহাতে খালাসীটি তাহাকে বলে যে কলিকাতার কেল্লায় যে নূতন রকমের টোটা প্রস্তুত হইতেছে তাহাতে গরু ও শূকরের চব্বি মিশ্রিত আছে। উহা প্রত্যেক সিপাহীকে দাত দিয়া কাটিয়া বন্দুকে পুরিতে হইবে, সুতরাং সিপাহীদের জাতির গুমোর আর বেশীদিন থাকিবে না । এই সংবাদ সিপাহী মহলে প্রকাশ পাইলে তাহদের মধ্যে দারুণ অসন্তোষ ও চাঞ্চল দেখা দেয় । ইংরেজ সেনাপতি বহু যুক্তি তর্কের দ্বারাও তাহাদের বিশ্বাস টলাইতে পারেন নাই। মঙ্গল পাণ্ডে নামক একজন সিপাহী অন্যান্ত সিপাহীগণকে জীবনপণ করিয়া জাতি ও ধৰ্ম্ম রক্ষার জন্য উত্তেজিত করিতে থাকে। সশস্ত্র মঙ্গল পাণ্ডেকে দমন করিতে গিয় জনৈক সেনানায়ক ও একজন সার্জেণ্ট মেজর উভয়েই তাহার হস্তে নিহত হন। অবশেষে বহু সশস্ত্র সৈনিকের সহায়তায় মঙ্গল পাণ্ডে ধৃত হইলে সামরিক আদালতের বিচারে তাহার প্রাণদণ্ড হয়। বারাকপুর হইতে বিদ্রোহ ভারতের নানাস্থানে ছড়াইয় পড়ে এবং তাঙ্গার ফলে দারুণ অশান্তির উদ্ভব হয়। এই বিদ্রোহ দমন করিতে ভারত সরকারকে যথেষ্ট কষ্ট পাইতে হইয়াছিল। বারাকপুরের প্রাচীন নাম চাণক । অনেকে মনে করেন যে কলিকাতার প্রতিষ্ঠাতা জব চাণকের নাম হইতে বারাকপুরের নাম চাণক হইয়াছে। কিন্তু এই ধারণা অমূলক । কারণ ১৬৬০ খৃষ্টাব্দে অঙ্কিত ব্রুকের মানচিত্রে র্কাকিনাড়া ও বরাহনগরের মধ্যে চাণক নামক ক্ষুদ্র গ্রামের উল্লেখ আছে। চাণকে ভাগিরথীতীরে একটি প্রকাণ্ড উদ্যান ও তাহার ভিতরে ভারতবর্ষের বড়লাটদিগের একটি প্রাসাদ আছে। ১৮০১ খৃষ্টাব্দের পূর্ব পর্যান্ত এই প্রাসাদে ইংরেজ ঈস্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানির প্রধান সেনানায়ক বাস করিতেন। কিন্তু উক্ত বৎসরে গভরর্ণর-জেনারল লর্ড, ওয়েলেসৃলি প্রধান সেনানায়ক হওয়া অবধি ইহা গভর্ণরজেনারলগণের বাসস্থান হইয়াছে। কলিকাতার কৰ্ম্মকঠোর শ্রমের পর নিকটস্থ পল্লীতে বিশ্রামের উপযোগী স্থান খুজিবার সময় লর্ড ওয়েলেসলি এই উদ্যানটিই পছন্দ করেন ; ইহার সহিত সত্যকার ইংরেজী পার্কের যথেষ্ট সাদৃশ্য আছে। ১৯১১ খৃষ্টাব্দ পৰ্যন্ত গভরর্ণর-জেনারলের বিশ্রাম করিতে বারাকপুরে যাইতেন। সিপাহী বিদ্রোহের সময়ের গভর্ণর-জেনারল লর্ড ক্যানিংএর পত্নী বারাকপুর প্রাসাদ অত্যন্ত ভালবাসিতেন বলিয়া দাৰ্জিলিং হইতে ফিরিবার পথে র্তাহার মৃত্যু হইলে বারাকপুর উদ্যানে তাহার মৃতদেহ