পাতা:বাংলায় ভ্রমণ -প্রথম খণ্ড.pdf/৮৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

48 বাংলায় ভ্রমণ 齡 দেখেন যে কালী যেন তাহাকে মূলাযোড়ে মন্দির নির্মাণ ও ব্রহ্মময়ী নামে মূৰ্ত্তি প্রতিষ্ঠা করিতে আদেশ করিতেছেন। একটি সুন্দর উদ্যান মধ্যে ব্রহ্মময়ীর মন্দির অবস্থিত। এখানে আনন্দশঙ্কর, গোপীশঙ্কর ও হরশঙ্কর নামে তিনটি বৃহৎ শিবলিঙ্গ আছে। ব্ৰহ্মময়ীর মন্দিরের পিছনদিকে একটি স্বতন্ত্র মন্দিরে গোপীনাথ জীউ নামক পাযাণ নিৰ্ম্মিত সুন্দর শ্ৰীকৃষ্ণ বিগ্রহ অবস্থিত । কালীবাড়ীতে প্রতি মাসের অমাবস্যা, রটন্তী চতুর্দশী এবং কালীপূজার সময় বিশেষ সমারোহ হয় এবং সমগ্র পের্ষি মাস ধরিয়া এখানে একটি মেলা বসে । মূলাযোড়ে একটি সংস্কৃত কলেজ, অতিথিশালা ও দাতব্য চিকিৎসালয় আছে। এই গুলিও গোপীমোহন ঠাকুরের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত। সুপ্রসিদ্ধ “অন্নদামঙ্গল” প্রণেতা মহাকবি ভারতচন্দ্র রায় গুণাকর মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্রের নিকট হইতে ব্রহ্মোত্তর প্রাপ্ত হইয়। মূলাযোড়ে বাসভবন নিৰ্ম্মাণ করিয়াছিলেন। তাহার শেষ জীবন এই স্থানেই অতিবাহিত হয়। মূলাযোড়ের নিকটবর্তী কাউগাছি গ্রামে একটি প্রাচীন গড়ের ধ্বংসাবশেষ দৃষ্ট হয়। কথিত আছে, পশ্চিম বঙ্গে মহারাষ্ট্রীয় বগীর উপদ্রবের সময় বৰ্দ্ধমানের তৎকালীন নাবালক মহারাজ কীৰ্ত্তিচন্দ্রের জননী এই স্থানে একটি গড় পরিবেষ্টিত প্রাসাদ নিৰ্ম্মাণ করাইয়৷ ছিলেন এবং বিপদের সময় এখানে আসিয়া বাস করিতেন । আবার কাহারও মতে ইহা একটি পুরাতন নীলকুঠির ধ্বংসাবশেষ। শু্যামনগরের নিকটবৰ্ত্তী রন্থতা গ্রাম পরলোকগত সুসাহিত্যিক রঙ্গলাল মুখোপাধ্যায় ও ত্ৰৈলোক্যনাথ মুখোপাধ্যায়ের জন্মস্থান। রঙ্গলাল প্রসিদ্ধ “বিশ্বকোষ” অভিধানের প্ৰবৰ্ত্তক ও প্রথম সম্পাদক । পরে কলিকাতার প্রাচ্যবিদ্যামহার্ণব নগেন্দ্র নাথ বসু মহাশয় বিশ্বকোষের সম্পাদনার ভার লইয়া এই বিরাট কোষ গ্রন্থ সম্পূর্ণ করেন। ত্ৰৈলোক্যনাথের কয়েকখানি উপন্যাস বাঙ্গালী পাঠক সমাজে সমাদর লাভ করিয়াছিল। কাকিনাড়া—কলিকাতা হইতে ১২ মাইল দূর । এখানে অনেক গুলি কল হইয়াছে বলিয়া স্টেশনের নাম র্কাকিনাড়, কিন্তু ভাটপাড়াই এ অঞ্চলের প্রসিদ্ধ স্থান । ভাটপাড়া বা ভট্টপল্লী অতি পুরাতন গ্রাম। এখানে দুই শত বৎসরেরও অধিক পুরাতন অনুন ২ ০টি মন্দির দৃষ্ট হয়। ভাটপাড়া বাংলা দেশে সংস্কৃত চর্চার একটি প্রধান কেন্দ্র । ইহা নানা শাস্ত্র-অধ্যাপক বহু পণ্ডিতের জন্মস্থান । ইহাদের মধ্য নিমাই তর্কপঞ্চানন, হলধর তর্কচূড়ামণি, তারাচরণ তর্করত্ন, রাখালদাস ন্যায়রত্ন, যছরাম সাৰ্ব্বভৌম, শিবচন্দ্র সাৰ্ব্বভৌম, প্রভৃতির নাম উল্লেখযোগ্য। ভাটপাড়ার পণ্ডিত মণ্ডলীর শাস্ত্রীয় মতামত সমগ্র বঙ্গে সম্মানিত । ভাটপাড়ার নিকটে জগদলে দুইটি শুষ্কপ্রায় পরিখা দৃষ্ট হয়। ঐতিহাসিকগণ বলেন যে মোগল বাহিনীর অগ্রগতি রোধ করিবার জন্য যশোহর রাজ প্রতাপাদিত্য এখানে একটি দুর্গ নিৰ্মাণ করিয়াছিলেন। বর্তমানে জগদ্দলে ও নিকটবৰ্ত্তী আটপুরে এবং খাস ভাটপাড়ায় অনেক গুলি পাটকল হইয়াছে।