পাতা:বাংলার ব্রত - অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৪০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বাংলার ব্ৰত উত্তর। সুখ হয়, সহায় হয়, সোয়াস্তি হয়। এর পর ঠাকুর দেখলেন ছেলেবুড়ো সবাই মিলে একটি করে পাতা মাথায় রাখছে আর জলে ডুব দিচ্ছে আর পাতাগুলি জলের স্রোতে ভেসে চলেছে। ঠাকুর ভেবে পান না মানুষরা সব করে কী ? এই বসন্তকালে, লোকে এ কী পাগলামি করতে লাগল। তখন ঠাকরুন তার কৌতুহল চরিতার্থ করে বলছেন, এরা গাছে আর মানুষে মিলে এক-এক পাতার কামনা জানিয়ে SIVUS KE এরা- পাকা পাতাটি মাথায় দিয়ে পাকা চুলে সিন্দুর পরে। কঁচা পাতাটি মাথায় দিয়ে কঁচা সোনার বর্ণ হয় । শুকনো পাতাটি মাথায় দিয়ে সুখ-সম্পত্তি বৃদ্ধি করে, ঝরা পাতাটি মাথায় দিয়ে মণিমুক্তোর ঝুরি পরে। কচি পাতাটি মাথায় দিয়ে কোলে কমল পুত্র ঘরে। এই ব্ৰতটিতে বসন্তদিনে মানুষে আর গাছপালায় মিলিয়ে একটুখানি রূপক —ছোটাে একটু নাটকের মতো করে গাথা হয়েছে ছাড়া আর কী বলা যাবে ? এই তো একটুখানি ব্ৰত, কিন্তু তবু এর মধ্যে বসন্তের দিনে নতুন এবং পুরনোর, মানুষের এবং বনের নিশ্বাসটুকু যখন এক তালে উঠছে পড়ছে দেখি তখন এটিকে ছোটাে বলতে ইচ্ছা হয় না ; এইটুকুর মধ্যে কতখানির ইঙ্গিত, কতখানি রস না পাচ্ছি। খাটি মেয়েলি ব্ৰতগুলি ঠিক কোনো দেবতার পুজো নয় ; এর মধ্যে ধর্মাচরণ কতক, কতক উৎসব ; কতক চিত্ৰকলা নাট্যকলা গীতকলা ইত্যাদিতে মিলে একটুখানি কামনার প্রতিচ্ছবি, কামনার প্রতিধ্বনি, কামনার প্রতিক্রিয়া । মানুষের ইচ্ছাকে হাতের লেখায় গলার সুরে এবং নাট্য নৃত্য এমনি নানা চেষ্টায় প্রত্যক্ষ করে তুলে ধর্মাচরণ করছে, এই হল ব্ৰতের নিখুঁত চেহারা। অন্তত এই প্ৰণালীতে সমস্ত প্ৰাচীন জাতিই ব্রত করছে দেখতে পাই। ‘আদৱ-সিংহাসন” ব্ৰতে মানুষ আদর চেয়ে মিষ্টি কথা পাবার কামনা ক’রে তো শাস্ত্রীয় হরিচরণ-ব্ৰতের মতো তামার টাটে দেবতার পাদপদ্ম লিখে