পাতা:বাংলার ব্রত - অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৪৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বাংলার ব্ৰত 8S তাতে ফুল দিয়ে বর চাওয়া হল এবং এখানেও কাজের জন্য যতটুকু ততটুকু হল আলপনা, এবং ততটুকু হল ছড়া। গদ্যসাহিত্য আধুনিক, সুতরাং কথায় এখন যা বলি, পূর্বে যখন পদ্যই সাহিত্যের ভাষা তখন ছড়াগুলি পদ্যেই বলা হত। কিন্তু এই ধরনের ছড়াকে কবিতা কিংবা গান কি নাটক কিছুই বলা যায় না । এরা কেবল পদ্যে মনের ইচ্ছা ব্যক্ত করছে, এই মাত্র। “জলি দে বাবা’ না বলে বলছি “দে জল, দে জল বাবা ” এতে জল আছে স্পষ্ট বোঝাল কিন্তু কাব্যরস তো নেই। এই ধরনের ছড়া কিংবা এই ছাচের ব্ৰতগুলিতে পদ্য, আলপনা ও নানা চলাবল থাকলেও এগুলিকে কোনোদিন চিত্ৰকলা কি কাব্য বা নাট্য-কলা বলে ধরা সম্ভব নয়। কিন্তু পরে যে দু-একটি ব্ৰতের ছড়া প্ৰকাশ করছি সেগুলির গঠনের এবং বঁধুনির প্রণালী দেখলেই বোঝা যাবে তার মধ্যে নাট্যকলার লক্ষণ কেমন পরিস্ফুট । আলপনার অংশটাকে দৃশ্যপটের হিসাবে নিয়ে, ছড়া ও ক্রিয়া থেকে ভাদুলি ব্ৰতের অনুষ্ঠানের যে মূতিটি পাওয়া যায় তা এই— ক্রিয়া আরম্ভ হল। ভাদ্র মাসের ভরা নদী, কলসি-কঁাখে জল তুলতে চলেছে একটি ছোটো মেয়ে এবং তার চেয়ে একটুও বড়ো নয় এমন একটি ঘোমটা-দেওয়া নতুন বউ এবং সঙ্গিনীগণ । জল তোলার গান বা ছড়া এ-নদী সে-নদী একখানে মুখ, ভাদুলিঠাকুরানি ঘুচাবেন দুখ । এ-নদী সে-নদী একখানে মুখ, দিবেন। ভাদুলি তিনিকুলে সুখ । একে একে নদীর জলে ফুল দিয়া ছোটো মেয়ে । নদী, নদী, কোথায় যাও ? বাপ-ভায়ের বার্তা দাও। ছোটো বউ । নদী, নদী, কোথায় যাও । সোয়ামি-শ্বশুরের বার্তা দাও ।