পাতা:বাংলা লিরিকের গোড়ার কথা.pdf/১১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ংলা লিরিকের গোড়ার কথ। ག পণ্ডিতেরা বাইরের থেকেই সত্যের ব্যাখ্যা দিয়ে থাকেন। দেহের মধ্যেই যে পরম জ্ঞান বিরাজ করছে, তার খবর তো তারা জানেন না । এই দোহাগুলির ভিতর গভীর তত্ত্বকথা যাই থাকৃ-না কেন, স্বরে ও ভাবে দুয়েই ষে এর এক-একটা কবিতা, সে-সম্বন্ধে অন্য কারোর মনে কোনো সন্দেহ থাকলেও আমার মনে তো একেবারেই নেই। কারণ, যে-রসের ছোয়াচ লাগলে বাক্য রসাত্মক হয়ে উঠে কাব্যের ধাপে পৌঁছয়, সেই রস এইসব দোহাতে আছে। শুধু তত্ত্বকথা হলে কবিতা হত না । কোনো দেশেই নির্জলা তত্ত্বকথা কি ধর্মসঙ্গীত এমনকি বিশুদ্ধ স্বদেশীমার্ক গানও কখনো বড় কবিতা হয়ে ওঠে নি। কেননা, তাতে সর্বদাই একটা বিশেষ বিশেষ প্রতিপাদ্য বিষয় থাকে । কিন্তু তত্ত্বকথা শোনানো বা কোনো-কিছু প্রতিপন্ন করতে যাওয়া লিরিকের কাজ নয়। তার কাজ হচ্ছে নিছক আনন্দ প্রকাশ করা, আর সেই আনন্দের ধ্বনির দ্বারা অপরের মনের ভিতর আনন্দ জাগিয়ে তোলা । তাই তো, প্রবোধচন্দ্রোদয় বলে সংস্কৃতে লেখা এক আধ্যাত্মিক নাটকের সমালোচনা করতে গিয়ে এক প্রাচীন আচার্য বলেছিলেন, অদ্বৈততত্ত্বের দ্বারা আর-যা কিছু করা যাক-না কেন, ভালো নাটক কখনো লেখা যায় না। শুনতে পাওয়া যায়, ইংরেজ মহাকবি মিলটন তার লেখা প্যারাডাইস লস্টের একখণ্ড র্তার পুরনো বন্ধু বাটলারকে উপহার পাঠিয়েছিলেন। বাটলার-সাহেব কেমব্রিজে গণিতের মস্ত বড় অধ্যাপক ; অঙ্কে তার পাকা মাথা । তিনি বইখানি পেয়ে মিলটনকে লিখে পাঠালেন, তোমার লেখাটা তো একরকম ভালোই বলে মনে হচ্ছে ; কিন্তু ওটা কি ! প্রমাণ করতে চাচ্ছে। বাটলার-সাহেবের বোধ হয় জানা ছিল না, কাব্য যদি তেড়েফুড়ে উঠে কিছু প্রমাণ করতে বসে যায়, তা হলে সেটা তখন আর কাব্য থাকে না, শাস্ত্র হয়ে ওঠে । { }