পাতা:বাংলা লিরিকের গোড়ার কথা.pdf/১২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বাংলা লিরিকের গোড়ার কথা دty হাজার বছর আগেকার লেখা চর্যাগানের ভাষা যে বাংলা, সে-সম্বন্ধে পণ্ডিতদের মনে এখন আর কোনো সন্দেহ নেই। কিছুদিন পূর্বেও এই ভাষাকে কেউ প্রাচীন মাগধী, কেউ মৈথিল, কেউ-বা আবার ওড়িয়া ভাষাও বলে মনে করতেন । কিন্তু এখন একেবারে স্থির হয়ে গেছে, এই ভাষা প্রাচীন বাংলা ভাষা। তবে, এই বাংলা ভাষার সঙ্গে তার দু তিন শো বছরের পরবর্তী বাংলা ভাষার একেবারে আকাশপাতাল তফাত । সগোত্র বলেও চেন ষায় না । বৌদ্ধ আচার্যেরা বরাবরই সর্বসাধারণের নিমিত্ত ধর্মপ্রচার করে গেছেন । সেই কারণে র্তাদের ভাষা ছিল সামান্য লোকের ভাষা । পুরাকালে র্তারা সংস্কৃতের বদলে তাই প্রাকৃতকেই বেশি মর্যাদা দিয়েছিলেন । সাধারণ লোকের কাছে সহজে সহজধর্ম প্রচারকল্পে বাংলাদেশের সিদ্ধাচার্যেরাও সংস্কৃত ছেড়ে তাই বাংলা ভাষাতেই তাদের গান বেঁধেছিলেন । কিন্তু কালক্রমে বাংলাদেশে ক্রমশ আবার পৌরাণিক ও তান্ত্রিক ব্রাহ্মণ্যধর্মের প্রতিষ্ঠা হতে থাকল। বৌদ্ধ আচার্যেরা বিদায় নিলেন কিংবা হিন্দু-সমাজেরই অন্তভুক্ত হয়ে গুপ্তভাবে রইলেন। চর্যাগানও এদেশ থেকে অন্তর্ধান করল । এ-তল্লাটে তাদের অস্তিত্ব পর্যন্ত কারোর জানা রইল না । এই তো সেদিন অর্থাৎ ১৯০৭ সালে, হরপ্রসাদ শাস্ত্রী মশায় নেপাল থেকে সেগুলোকে উদ্ধার করে নিয়ে এসে ছাপিয়ে দেন। শাস্ত্রীমশায়ের পুথিতে এই চর্যাগানের সংগ্রহের নাম দেওয়া আছে– চর্যাচর্যবিনিশ্চয়। এই নাম ঠিক কি না, সে-সম্বন্ধে পণ্ডিতদের মধ্যে অনেক তর্কবিবাদ আছে । কেউ বলেন, এর নাম হবে আশ্চর্যচর্যাশ্চয় ; কেউ বলেন, চর্ধাশ্চর্যবিনিশ্চয়। চর্যাগীতিকোষবৃত্তি নামও পাওয়া যায়। কিন্তু আমাদের সে-বিতর্কে কাজ কি ? গানগুলো যে কি তাই দেখা যাক-না কেন ?