পাতা:বাংলা শব্দতত্ত্ব - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১১৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলা কৃৎ ও তদ্ধিত
৯৭

উ প্রত্যয়

  চালু (চলনশীল) ঢালু (ঢাল-বিশিষ্ট) নিচু (নিম্নগামী) কলু (ঘানিফল বিশিষ্ট), গাড়ু (গাগর শব্দ হইতে গাগরু) আগুপিছু (অগ্রবর্তী-পশ্চাদ্‌বর্তী)।

  মানুষের নাম: যাদব হইতে যাদু, কালা হইতে কালু, শিব হইতে শিবু, পাঁচকড়ি হইতে পাঁচু।

উ+আ প্রত্যয়

  বিশিষ্ট অর্থে, যথা: জলবিশিষ্ট জলুয়া (জোলাে), পাঁঁকুয়া (পেঁকো) জাঁঁকুয়া (জেঁকো) বাতুয়া (বেতে) পড়ুয়া (পােড়ো)।

  সম্বন্ধ অর্থে: মাছুয়া (মেছো) বুনুয়া (বুনো) ঘরুয়া (ঘােরো) মাঠুয়া (মেঠো)।

  নির্মিত অর্থে: কাঠুয়া (কেঠো) ধানুয়া (ধেনো)

আ+ও প্রত্যয়

  ঘেরাও চড়াও উধাও ফেলাও (ফলাও)।

ও+আ প্রত্যয়

  বাঁঁচোয়া ঘরোয়া চড়ােয়া ধরােয়া আগােয়া।

অন্+ই প্রত্যয়

  মনােযােগ করিলে দেখা যাইবে, অন্ প্রত্যয়ের উত্তর আ প্রত্যয় কেবল একমাত্রিক ধাতুতেই প্রয়ােগ হইয়া থাকে; যেমন, ধর্ হইতে ধর্‌না (ধন্না), কাঁঁদ্ হইতে কাঁঁদ্‌না (কান্না)। কিন্তু বহুমাত্রিক শব্দের উত্তর এরূপ হয় না। আমরা কামড়ানা কটকটানা বলি না, তাহার স্থলে কামড়ানি কটকটানি বলিয়া থাকি; অর্থাৎ অন্ প্রত্যয়ের উত্তর আ প্রত্যয় না করিয়া ই প্রত্যয় করিয়া থাকি।

  অন্ প্রত্যয়ের উত্তর ই প্রত্যয় একমাত্রিকেও হয়; যথা মাতনি (মাতুনি) বাঁঁধনি (বাঁধুনি) জ্বলনি (জ্বলুনি) কাঁঁপনি (কাঁঁপুনি) দাপনি (দাপুনি) আঁটনি (আঁটুনি)।

  মূল ধাতুটি হলন্ত কিংবা আকারান্ত, তাহা এই অন্+ই প্রত্যয়ের সাহায্যে জানা যাইতে পারে। তাকনি না হইয়া তাকানি হইয়াছে, তখন বুঝিতে হইবে মূল ধাতুটি তাকা। এইরূপ, আছড়া চট্‌কা কাম্‌ড়া ইত্যাদি।

  অন্+ই প্রত্যয়সিদ্ধ অধিকাংশ ক্রিয়াবাচক শব্দই অপ্রিয়ভাব ব্যক্ত করে;