পাতা:বাংলা শব্দতত্ত্ব - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৩৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১১৬
বাংলা শব্দতত্ত্ব

তাঁহার কাগজে মাছের তেলের উপর বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধ লেখেন, তবে আশা করি কোনো পণ্ডিত তাঁহাকে এ অপবাদ দিবেন না যে, তিনি মাছের তেল মাথায় মাখিবার জন্য পাঠকদিগকে অন্যায় উত্তেজিত করিতেছেন।

 প্রতিবাদ-লেখক মহাশয় হাস্তরসের অবতারণা করিয়া লিখিয়াছেন:

 যদি কেহ লেখেন ‘যুধিষ্ঠির দ্রৌপদীকে বলিলেন— প্রিয়ে তুমি যে-কথা বলিতেছ তাহার বিসমিল্লায়ই গলদ’ তাহা হইলে প্রয়োগটি কি অতিশোভন হইবে?

 প্রয়োগের শোভনতাবিচার ব্যাকরণের কাজ নহে, অলংকারশাস্ত্রের কাজ—ইহা পণ্ডিতমহাশয় জানেন না, এ কথা বিশ্বাস করিতে আমাদের সাহস হয় না। উল্লিখিত প্রয়োগে ব্যাকরণের কোনো ভুলই নাই, অলংকারের দোষ আছে ‘বিসমিল্লায় গলদ’ কথাটা এমন জায়গাতেও বসিতে পারে যেখানে অলংকারের দোষ না হইয়া গুণ হইবে। অতএব পণ্ডিতমহাশয়ের রসিকতা এখানে বাজে খরচ হইল। যাঁহারা প্রাকৃত বাংলার ব্যাকরণ লিখিতেছেন, তাঁহারা এই হাস্যবাণে বাসায় গিয়া মরিয়া থাকিবেন না। শ্রীযুক্ত পণ্ডিতমহাশয় এ কথাও মনে রাখিবেন যে, চলিত ভাষা অস্থানে বসাইলেই যে কেবল ভাষার প্রয়োগদোষ হয়, তাহা নহে; বিশুদ্ধ সংস্কৃত শব্দ বিশুদ্ধ সংস্কৃতনিয়মে বাংলায় বসাইলেও অলংকারদোষ ঘটিতে পারে। কেহ যদি বলেন, আপনার সুন্দরী বক্তৃতা শুনিয়া আদ্যকার সভা আপ্যায়িতা হইয়াছে, তবে তাহাতে স্বর্গীয় বোপদেবের কোনো আপত্তি থাকিবার কথা নাই, কিন্তু শ্রোতারা গাম্ভীর্যরক্ষা না করিতেও পারেন।

 খাটি বাংলা কথাগুলির নিয়ম অত্যন্ত পাকা; উট কথাটাকে কোনোমতেই স্ত্রীলিঙ্গে ‘উটী’ করা যাইবে না, অথবা দাগ শব্দের উত্তর কোনোমতেই ইত প্রত্যয় করিয়া ‘দাগিত’ হইবে না, ইহাতে সংস্কৃতব্যাকরণ যতই চক্ষু রক্তবর্ণ করুন। কিন্তু সংস্কৃত শঙ্কের বেলায় আমাদের স্বাধীনতা অনেকটা বেশি। আমরা ইচ্ছা করিজে ‘এই মেয়েটি বড়ো সুন্দরী’ বলিতে পারি, আবার ‘এই মেয়েটি বড়ো সুন্দর’ ইহাও বলা চলে। আমাদের পণ্ডিতমশায় এক জায়গায় লিথিয়াছেন, ‘বিদ্যা যশের হেতুরূপে প্রতীয়মান হয়।’ প্রতীয়মান কথাটা তিনি বাংলা ব্যাকরণের নিয়মে ব্যবহার করিয়াছেন, কিন্তু যদি সংস্কৃতনিয়মে ‘প্রতীয়মানা’ লিখিতেন তাহাও চলিত। আর-এক জায়গায় লিখিয়াছেন, ‘বিভীষিকাময়ী