পাতা:বাংলা শব্দতত্ত্ব - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৫১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১৩২ বাংলা শব্দতত্ত্ব ম-এর দৃষ্টান্ত : চটেমটে রেগেমেগে ছিচকে-মিচকে সিটকে-মিটকে চটকেমটকে চমকে-মমকে চেচিয়ে-মেচিয়ে আঁৎকে-মাংকে জড়িয়ে-মড়িয়ে আঁচড়েমাচড়ে শুকিয়ে-মুকিয়ে কুঁচকে-মুচকে তেড়েমেড়ে এলোমেলো খিটিমিটি হুড়মুড় বাঁকড়া-মাকড়া কটোমটো । দেখা যাইতেছে ম-এর দৃষ্টান্তগুলি বেশ সাধু শাস্ত ভাবের নহে, কিছু রুক্ষ রকমের। বোধ হয় চিন্তা করিয়া দেখিলে দেখা যাইবে, সচরাচর কথাতেও আমরা ম অক্ষরটাকে ট-এর পরিবর্তে ব্যবহার করি, অন্তত ব্যবহার করিলে কানে লাগে না, কিন্তু সে-সকল জায়গায় ম আপনার মেজাজটুকু প্রকাশ করে । আমরা বিষ-মিষ বলিতে পারি কিন্তু সন্দেশ-মন্দেশ যদি বলি তবে সন্দেশের গৌরবটুকু একেবারে নষ্ট হইয়া যাইবে । ছটে ঘুষোমুষো লাগিয়ে দিলেই ঠিক হয়ে যাবে, এ কথা বলা চলে কিন্তু বন্ধুকে যত্নমত্ব বা গরিবকে দানমান করা উচিত, একেবারে অচল । হিংসে-মিংসে করা যায়, কিন্তু ভক্তি-মক্তি করা যায় না ; তেমন তেমন স্থলে খোচা-মোচা দেওয়া যায় কিন্তু আদর-মাদর নিষিদ্ধ । অতএব ট-এর ন্যায় ফ ও ম প্রশাস্ত নিরপেক্ষ স্বভাবের নহে, ইহা নিশ্চয় । তার পরে, কতকগুলি বিশেষ কথার বিশেষ বিরুতি প্রচলিত আছে । সেগুলি সেই কথারই সম্পত্তি ; যেমন, পড়েহড়ে বেছেগুছে মিলেজুলে খেয়েদেয়ে মিশেগুশে সেজেগুজে মেখেচুখে জুটেপুটে লুটেপুটে চুকেবুকে বকেঝকে । এইগুলি বিশেষ প্রয়োগের দৃষ্টান্ত । উল্লিখিত তালিকাটি ক্রিয়াপদের । এখানে বিশেষ পদেরও দৃষ্টান্ত দেওয়া যাইতে পারে : কাপড়-চোপড় আশপাশ বাসন-কোসন রসকস রাবদাব গিন্নিবান্ত্রি তাড়াহুড়ে চোটপাট চাকর-বাকর হাড়িকুড়ি ; ফাকি জুকি অঁাকজোক এলাগোলা এলোথেলো বেঁটেখেটে খাবার-দাবার ছুতোনাত চাষাভুষো অদ্ধিসদ্ধি অলিগলি হাবুডুৰু নড়বড় হুলস্থূল । ১ সংস্কৃত ভাষায় কুণ্ডি শব্দের অর্থ পাত্রবিশেষ, সম্ভবত ইহা হইতে ইড়িকুড়ি শব্দের কুড়ি উৎপন্ন ; এই-সকল তালিকার মধ্যে এমন আরো থাকিতে পারে যে-স্থলে এই দোসর শব্দগুলিকে অর্থহীনের কোঠায় ফেলা চলিবে না । --- ২ ছুতোনাত শব্দে ছুতা কী নিয়ম অনুসারে ছতো হইয়াছে এবং চাষাভূষা শব্দের छूयां কী কারণে ভুষো হইল পূর্বেই তাহ বলিয়াছি।