পাতা:বাংলা শব্দতত্ত্ব - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৫৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

See বাংলা শৰতত্ত্ব চোতাপত্রে দলিলপত্র এবং খাতাপত্র। ইহাদের মধ্যে কোনো কোনো কথায় পত্র শব্দের কিঞ্চিৎ সার্থকতা পাওয়া যায়, কিন্তু অনেক স্থলে নয় । যে-সকল জোড়াশব্দের দুই অংশের এক অর্থ নহে কিন্তু অর্থটা কাছাকাছি, তাহাজের দৃষ্টান্ত ঃ মাল-মসলা দোকান-হাট হাকডাক ধীরেন্থন্থে ভাব-গতিক ভাবভঙ্গি লম্ফঝৰ্ম্ম চাল-চলন পাল-পার্বণ কাও-কারখানা কালিঝুলি ঝড়ঝাপট বনজঙ্গল খানাখন্দ জোতজমা লোক-লশকর চুরি-চামারি উকিঝুকি পাজিপুথি লম্বা-চওড়া দলামলা বাছ-বিচার জালা-যন্ত্রণা সাতপাচ নয়ছয় ছকড়া-নকড়া উনিশ-বিশ সাত-সতেরো আলাপ-পরিচয় কথাবার্তা বন-বাদাড় ঝোপঝাড় হাসিখুশি আমোদ-আহলাদ লোহা-লক্কড় শাক-সবজি বৃষ্টি-বাদল ঝড়তুফান লাথিবীটা সেঁকতাপ আদর-অভ্যর্থনা চালচুলো চাষবাস মুটে-মজুর ছলবল। ছাইভস্ম প্রভৃতি দুই সমানার্থক জোড়াশব্দ জোর দিবার জন্য প্রয়োগ করা হয়— মালমসলা দোকানহাট প্রভৃতি সমশ্রেণীর ভিন্নার্থক জোড়াশব্দে একটা ইত্যাস্থিচক অনির্দিষ্টতা প্রকাশ করে। কাও-কারখানা চুরি-চামারি হাসিখুশি প্রভৃতি কথাগুলির মধ্যে ভাষাও আছে আভাসও আছে। যে-সকল পদার্থ আমরা সচরাচর একসঙ্গে দেখি তাহদের মধ্যে বাছিয়া ছুটি পদার্থের নাম একত্রে জুড়িয়া বাকিগুলাকে ইত্যাদিভাবে বুঝাইয়া দিবার প্রথাও বাংলায় প্রচলিত আছে, যেমন, ঘটিবাটি। যদি বলা যায় ঘটি-বাটি সামলাইয়ো, তাহার অর্থ এমন নহে ষে, কেবল ঘটি ও বাটিই সামলাইতে হইবে, এইসঙ্গে থালা ঘড়া প্রভৃতি অনেক অস্থাবর জিনিস আসিয়া পড়ে। কাহারে। সহিত মাঠে-ঘাটে দেখা হইয়া থাকে, বলিলে কেবল যে ওই ছুটি মাত্র স্থানেই সাক্ষাৎ ঘটে তাহা বুঝায় না, উক্ত লোকটির সঙ্গে যেখানে-সেখানেই দেখা হয় এইরূপ বুঝিতে হয়। এইরূপ জোড়াৰখার দৃষ্টান্ত ; পথঘাট ঘর-দুয়োর ঘটিবাটি কাছা-কোচ হাতিঘোড়া বাঘ-ভাল্লুক খেলাধুলা ( খেলা দেয়াল ) পড়াশুনা খালবিল লোক-লশকর গাডু-গামছা লেপকাথা গান-বাজনা খেতখোলা কানাখোড়া কালিয়া-পোলাও শাকভাত সেপাই-সাস্ত্রী নাড়ি-মক্ষত্রে কোলেপিঠে কাঠখড় দত্যিানো ভূতপ্রেত। ' বিপরীতাৰ্থক শৰ জুড়িয়া সমগ্রতা ও বৈপরীত্য বুঝাইবার দৃষ্টান্ত ; জাগাগোড়া ল্যাজামুড়ো আকাশ-পাতাল দেওয়া-থোওয়া নরম-গরম আনাগোন। উলটোপালটা তোলপাড় আগা-পাস্তাড়া ।