পাতা:বাংলা শব্দতত্ত্ব - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৬১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

»8२ বাংলা শব্দতত্ত্ব দ্বারা বিশেষ্যপদ বিশেষভাবে নির্দিষ্ট হইলেও সংখ্যার সংস্রবে তাহারা তির্যকরূপ গ্রহণ করে। যেমন, ‘তোমরা দুই বন্ধুতে সেই স্কুটো কুকুরে’ ইত্যাদি । অনেকের মধ্যে বিশেষ একাংশ যখন এমন কিছু করে অপরাংশ বাহ করে না তখন কর্তৃপদে তির্যকৃরূপ ব্যবহার হয়। যথা ‘তাদের মধ্যে দুজনে গেল দক্ষিণে”— এরূপ বাক্যের মধ্যে একটি অসমাপ্তি আছে। অর্থাৎ আর কেহ আর কোনো দিকে গিয়াছে বা বাকি কেহ যায় নাই এরূপ বুঝাইতেছে। যখন বলি ‘একজনে বললে হা’ তখন “আর-একজন বললে না? এমন আরএকটা কিছু শুনিবার অপেক্ষ থাকে । কিন্তু যদি বলা যায় ‘একজন বললে, ই। তবে সেই সংবাদই পর্যাপ্ত । তির্যকৃরূপে হলন্ত শব্দে একার যোজনা সহজ, যেমন বানর বানরে। ( বাংলায় বানর শব্দ হলন্ত )। অকারাস্ত, আকারাস্ত এবং ওকারাস্ত শব্দের সঙ্গেও ‘এ’ যোজনায় বাধা নাই— ‘ঘোড়াএ’ ( ঘোড়ায় ) পেচোএ’ (পেচোয়) ইত্যাদি। এতদব্যতীত অন্ত স্বরান্ত শব্দে ‘এ’ যোগ করিতে হইলে 'ত' ব্যঞ্জনবর্ণকে মধ্যস্থ করিতে হয় । যেমন "গোরুতে’, ইত্যাদি । কিন্তু শব্দের শেষে যখন ব্যঞ্জনকে আশ্রয় না করিয়া শুদ্ধ স্বর থাকে তখন “ত’কে মধ্যস্থরূপে প্রয়োজন হয় না। যেমন উই, উইএ ( উইয়ে ), বউ, বউএ ( বউয়ে ) ইত্যাদি । এ কথা মনে রাখা আবশ্যক বাংলায় বিভক্তিরূপে যেখানে একার প্রয়োগ হয় সেখানে প্রায় সর্বত্রই বিকল্পে "তে" প্রয়োগ হইতে পারে। এইজন্য ‘ঘোড়ায় লাথি মেরেছে’ এবং ‘ঘোড়াতে লাথি মেরেছে? দুইই হয় । ‘উইয়ে নষ্ট করেছে’ এবং ‘উইতে’ বা "উইয়েতে নষ্ট করেছে। হলন্ত শব্দে এই ‘তে’ বিভক্তি গ্রহণকালে তৎপূর্ববর্তী ব্যঞ্জনে পুনশ্চ একার যোগ করিতে হয় । যেমন ‘বানরেতে’, ‘ছাগলেতে’ । আষাঢ় ১৩১৮