পাতা:বাংলা শব্দতত্ত্ব - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৬৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বাংলা নির্দেশক > 82 তবে ‘খানা’র প্রয়োগ সম্বন্ধে কয়েকটা সাধারণ নিয়ম বলা যায়। জীব সম্বন্ধে কোথাও ইহার ব্যবহার নাই ; গোরখানা ভেড়াখানা হয় না। দেহ ও দেহের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সম্বন্ধে ইহার ব্যবহারে বাধা নাই। দেহখানা, হাতখানা, পাখানা। বুকখানা সাত হাত হয়ে উঠল ; মায়ের কোলখানি ভরে আছে ; মাংসখানা ঝুলে পড়েছে ; ঠোটখানি রাঙা ; ভুরুখানি বাকা । অরূপ পদার্থ সম্বন্ধে ইহার ব্যবহার নাই। বাতাসখানা বলা চলে না ; আলোখানাও সেইরূপ ; কারণ, তাহার অবয়ব নাই। যত্বখানা, আদরখানা, ভয়খানা, রাগখানা হয় না । কিন্তু ব্যতিক্রম আছে ; যথা, ভাবখানা, স্বভাবখানা, ধরনখানা, চলনখানি । যে-সকল বস্তু অবয়ব গ্রহণ না করিয়া তরল বা বিচ্ছিন্নভাবে থাকে তাহাদের সম্বন্ধে ‘খানা’ বসে না। যেমন, বালিখানা, ধুলোখানা, মাটিখানা, ফুধখানা, জলখানা, তেলখানা হয় না । ধুলা কাদা তেল জল প্রভৃতি শব্দের সহিত ’এক’ শব্দটিকে বিশেষণরূপে যোগ করা যায় না। যেমন, একটা ধুলা বা একটা জল বলি না। কিন্তু ‘অনেক’ শব্দটির সহিত এরূপ কোনো বাধা নাই। যেমন, অনেকটা জল বা অনেকখানি জল বলা চলে। বলা বাহুল্য এখানে ‘অনেক’ শব্দ দ্বারা সংখ্যা বুঝাইতেছে না —পরিমাণ বুঝাইতেছে। এখানে বিশেষরূপে লক্ষ করিবার বিষয় এই যে, এরূপ স্থলে আমরা “খানি’ ব্যবহার করি ; ‘খানা’ ব্যবহার করি না । ‘অনেকখানি দুধ’ বলি, ‘অনেকখানা দুধ’ বলি না। এ স্থলে দেখা যাইতেছে, পরিমাণ ও সংখ্যা সম্বন্ধে খানি ব্যবহার হয়, ‘খান’ কেবলমাত্র সংখ্যা সম্বন্ধেই থাটে । বাংলায় হাসিখানি শব্দ প্রচলিত আছে । কিন্তু ইহা অাদরের ভাষা । আদর করিয়া হাসিকে যেন স্বতন্ত্র একটি বস্তুর মতো করিয়া দেখা যাইতেছে । মনে পড়িতেছে বৈষ্ণব সাহিত্যে এমন ভাবের কথা কোথায় দেখিয়াছি যে, তাহার মুখের কথাখানির ঘদি লাগ পাইতাম’– এখানে আদর করিয়া মুখের কথাটিকে যেন মূর্তি দেওয়া হইতেছে। এইরূপ ভাবেই ‘স্পর্শধানি' বলিয়া থাকি । * খানি ও থানা যেখানে বসে সেখানে ইচ্ছামত সর্বত্রই টি ও টা বসিতে পারে— কিন্তু টি ও টা-র স্থলে সর্বত্র খানি ও খানার অধিকার নাই।