পাতা:বাংলা শব্দতত্ত্ব - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৭২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলা বহুবচন
১৫৩

অর্থাৎ নাম ও আনুষঙ্গিক অন্য সকলে। এরূপ হলে কদাপি গুলা গুলির এয়ােগ হয় না। কারণ রামগুলি বলিলে প্রত্যেকটিই রাম হওয়া আবশ্যক হয়।

 ইহা হইতে বুঝা যাইতেছে এই ‘এরা’ সম্বকারকরূপ হইতে উৎপন্ন। অর্থাৎ রামের সহিত সম্বন্ধযুক্ত যাহারা তাহারাই ‘রামেরা’। যেমন তির্যকরূপে ‘জন’ শব্দকে জোর দিয়া হইয়াছে ‘জনা’, সেইরুপ ‘রামের’ শব্দকে জোর দিয়া হইয়াছে রামেরা।

 ‘সব’, ‘সকল’ ও ‘সমুদয়’ শব্দ বিশেষ শব্দের পূর্বে বিশেষণরূপে প্রযুক্ত হইয়া বহুত্ব অর্থ প্রকাশ করে। কিন্তু বস্তুত এই বিশেষণগুলি সমষ্টিবাচক। ‘সব লােক’ এবং ‘লােকগুলি’-র মধ্যে অর্থভেদ আছে। ‘সব লােক’ ইংরেজিতে all men এবং লোকগুলি the men।

 লিখিত বাংলায়, সফল’ ও ‘সমুদয়’ শব্দ বিশেষ্যপদের পরে বসে। কিন্তু কথিত বাংলায় কখনােই তা হয় না। সকল গােরু বলি, গােরু সকল বলি না। বাংলা ভাষার প্রকৃতিবিরুদ্ধ এইরূপ প্রয়ােগ সম্ভবত আধুনিককালে গদ্যরচনা সৃষ্টির সময়ে প্রবর্তিত হইয়াছে। লিখিত ভাষায় ‘সকল’ যখন কোনাে শব্দের পরে বসে তখন তাহা তাহার মূল অর্থ ত্যাগ করিয়া শব্দটিকে বহুবচনের ভাব দান করে। লােকগুলি এবং লােকসকল একই অর্থে ব্যবহৃত হইতে পারে।

 প্রাচীন লিখিত ভাষায় ‘সব’ শব্দ বিশেষ্যপদের পরে যুক্ত হইত। এখন সে রীতি উঠিয়া গেছে, এখন কেবল পূর্বেই তাহার ব্যবহার আছে। কেবল বর্তমান কাব্যসাহিত্যে এখনাে ইহার প্রয়ােগ দেখা যায়– যথা, ‘পাখি সব করে রব’। বর্তমানে বিশেষপদের পরে ‘সব’ শব্দ বসাইতে হইলে বিশেষ্য বহুবচনরূপ গ্রহণ করে। যথা, পাখিরা সব, ছেলেরা সব অথবা ছেলেরা সবাই। বলা বাহুল্য জীববাচক শব্দ ব্যতীত অন্যত্র বহুবচনে এই রা’ ও ‘এ’ চিহ্ন বসে না। বানরগুলা সব, ঘােড়াগুলা সব, টেবিলগুলা সব, দোয়াতগুলা সব– এইরূপ গুলাযােগে, সচেতন অচেতন সকল পদার্থ সম্বন্ধেই ‘সব’ শব্দ ব্যবহৃত হইতে পারে।

 ‘অনেক’ বিশেষণ শব্দ যখন বিশেষ্যপদের পূর্বে বসে তখন স্বভাবতই তদ্দ্বারা বিশেষ্যের বহুত্ব বুঝায়। কিন্তু এই ‘অনেক’ বিশেষণের সংস্রবে বিশেষ্যপদ পুনশ্চ বহুবচনরূপ গ্রহণ করে না। ইংরেজিতে many বিশেষণ