অর্থাৎ শ্যামকে সম্বোধন করিয়া দূতী কহিতেছে:
প্রেমগজের দলন সহিতে না পারিয়া রাধিকা বাঁচিয়া থাকা ধিক্কারযোগ্য জ্ঞান করিতেছেন এবং অন্তর্গত তোমাকে নির্গত করিবার জন্য বিবিধ চেষ্টা করিতেছেন। তোমার অস্থির নয়নশরঘাতে বিষম জ্বরাতুর হইয়া বিরহিণী পদ্মশয়ন অবলম্বন করিয়াছেন। রাধামোহন কহিতেছেন, যাহাকে পঞ্চবাণ লাগে তাহার এরূপ আচরণ কিছুই অপরূপ নহে।
এ স্থলে পহুঁ শব্দের কী অর্থ হইতেছে। ‘রাধামোহনের প্রভু বলিতেছেন’ এরূপ অর্থ অসংগত। কারণ, কৃষ্ণের মুখে এরূপ উত্তর নিতান্ত রসভঙ্গজনক। ‘রাধামোহন কহিতেছেন হে প্রভু’ এরূপ অর্থও এ স্থলে ঠিক খাটে না; কারণ, সেরূপ অর্থ হইলে পঁহু শব্দ পরে বসিত— তাহা হইলে কবি সম্ভবত ‘রাধামোহন কহে অপরূপ নহে পঁহু’ এইরূপ শব্দবিন্যাস ব্যবহার করিতেন।
যুগলমূতি বর্ণনায় গোবিন্দদাস কহিতেছেন:
ও নব পদুমিনী সাজ,
ইহ মত্ত মধুকর রাজ।
ও মুখ চন্দ উজোর,
ইহ দিঠি লুবধ চকোর।
গোবিন্দদাস পঁহু ধন্দ,
অরুণ নিয়ড়ে পুন চন্দ।
এখানে ভণিতার অর্থ:
অরুণের নিকট চাঁদ দেখিয়া গোবিন্দদাসের ধাঁদা লাগিয়াছে।
গোবিন্দদাসের প্রভুর ধাঁদা লাগিয়াছে এ কথা বলা যায় না, কারণ তিনিই বর্ণনার বিষয়। এখানে পঁহু সম্বোধন পদ নহে তাহা পড়িলেই বুঝা যায়।
শ্যামের সেবাসমাপনান্তে রাধিকা সখীসহ গৃহে ফিরিতেছেন:
সখীগণ মেলি করল জয়কার,
মরু অঙ্গে দেয়ল ফুলহার।
নিজ মন্দিরে ধনী করল প্রয়াণ,
ধন বনে রহল সুনাগর কান।
সখীগণ সঙ্গে রঙ্গে চলু গোরী,
মণিময় ভূষণে অঙ্গ উজোরি।