পাতা:বাংলা শব্দতত্ত্ব - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২১৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
প্রতিশব্দ
১৯৯

হচ্ছে ‘আধি সাংস্কৃতিক’। এর ঠিক মানেটা আন্দাজ করা অসম্ভব বললেই হয়। প্রথমত culture শব্দের বাংলা একটি করতে হবে। আমি বলি মনঃপ্রকর্ষ বা চিত্তপ্রকর্ষ বল্‌লে ভাবখানার একটা ইসারা পাওয়া যায়। Cultured লোককে বলা যেতে পারে প্রকৃষ্টচিত্ত বা প্রকৃষ্টমনা। যদি বলতে হয় অঙ্কশাস্ত্রে তিনি cultured তা হলে বাংলায় বলবে অঙ্কশাস্ত্রে তিনি প্রকর্ষপ্রাপ্ত। অমুক পরিবারে culture-এর atmosphere আছে বলতে হলে বলা যেতে পারে, অমুক পরিবারে মনঃপ্রকর্ষ বা চিত্তপ্রকর্ষের আবহাওয়া আছে। কৃষ্টি কথাটা আমার কানে একটুও ভালো লাগে না। বরঞ্চ উৎকৃষ্টি[১] বল্‌লেও কোনোমতে চলত।

 বা হোক আমার মতে cultural self-কে চিত্তপ্রকর্ষগত বা মনঃকর্যগত সত্তা বা ব্যক্তিত্ব বলা যায়। আরো দুটো কথা দিয়েছ intellectual passion, intellectual self। সংরাগ শব্দকে আমি passion অর্থে ব্যবহার করি। অতএব আমার মতে intellectual passion-কে বুদ্ধিগত সংরাগ ও intellectual self-কে বুদ্ধিগত ব্যক্তিত্ব বল্‌লে ভাবটা বুঝতে বাধবে না।

 যাই হোক বহুল ব্যবহার ছাড়া এ-সব শব্দ ভাষায় প্রাণবান হয়ে ওঠে না।

 বলা বাহুল্য physical culture-কে বলতে হবে দেহপ্রকর্ষ চর্চা।[২]

 ৪ আষাঢ় ১৩৩৯

১৫

ভূতত্বের পরিভাষা আলোচনা আমার পক্ষে অসাধ্য। Fossil শব্দকে শিলক ও Fossilized-কে শিলীকৃত বলা চলে। Subman-কে অবমানব বললেই ভালো হয়। প্রাতর্ ও প্রত্যুষ শব্দের যোগে যে শব্দ বানিয়েছ কানে অসংগত ঠেকে। প্রাতর্ শব্দের পরিবর্তে প্রথম বা প্রাক্ ব্যবহার করলে চলে না কি, Eolith=প্রাক্‌প্রস্তর। Eoanthropus=প্রাক্‌মানব। Eocene=প্রাগাধুনিক

 Proterozoic= পরাজৈবিক।[৩]

 ৭ কার্তিক ১৩৩৯

  1. দ্রষ্টব্য ‘কালচার ও সংস্কৃতি’}}
  2. শ্রীসুধীরকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়কে লিখিত পত্র
  3. শ্রীসতীশরঞ্জন খাস্তগীরকে লিখিত পত্র