পাতা:বাংলা শব্দতত্ত্ব - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৪৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
২২৪
বাংলা শব্দতত্ত্ব

 আমরা প্রথমে ক্রিয়াপদের তালিকা দিতেছি। বাংলায় একবচনে ও বহুবচনে ক্রিয়ার প্রকৃতির কোনো পার্থক্য ঘটে না বলিয়াই জানি, এইজন্য নীচের তালিকায় বহুবচনের উল্লেখ নাই। যদি কোনো জেলায় বহুবচনের বিশেষ রূপ থাকে তবে তাহা নির্দেশ করা আবশ্যক।

 এইখানে হসন্ত উচ্চারণ সম্বন্ধে একটা কথা বলা দরকার। বাংলায় সাধারণত শব্দের শেষবর্ণস্থিত অকারের উচ্চারণ হয় না। যেখানে উচ্চারণ হয় সেখানে তাহা ওকারের মতো হইয়া যায়। যেমন ‘বন’, ‘মন’, এ শব্দগুলি হসন্ত। ‘ঘন’ শব্দটি হসন্ত নহে। কিন্তু উচ্চারণ হিসাবে লিখিতে হইলে লেখা উচিত, ঘনো। ‘কত’=কতো। ‘বড়’=বড়ো। ‘ছোট’=ছোটো। প্রসঙ্গক্রমে বলিয়া রাখি বাংলায় দুই অক্ষরের বিশেষণমাত্রই এইরূপ স্বরান্ত। বাংলায় হসন্তের আর-একটি নিয়ম আছে। বাংলায় যে অসংযুক্ত শব্দের পূর্বে স্বরবর্ণ ও পরে ব্যঞ্জনবর্ণ আছে সে শব্দ নিজের অকার বর্জন করে। ‘পাগল্‌’ শব্দের গ আপন অকার রক্ষা করে যেহেতু পরবর্তী ল-এ কোনো স্বর নাই। কিন্তু ‘পাগ্‌লা’ বা ‘পাগ্‌লী’ শব্দে গ অকার বর্জন করে। এইরূপ—আপন—আপ্‌নি, ঘটক—ঘট্‌কী, গরম—গর্‌মি ইত্যাদি। বলা বাহুল্য, অনতিপ্রচলিত সংস্কৃত শব্দে এ নিয়ম খাটে না, যেমন ঘোটক—ঘোটকী। এইপ্রকার হসন্ত সম্বন্ধে বাংলায় সাধারণ নিয়মের যখন প্রায় ব্যতিক্রম দেখা যায় না তখন আমরা এরূপ স্থলে বিশেষভাবে হসন্তচিহ্ন দিব না—যেমন ‘করেন্‌’ না লিখিয়া ‘করেন’ লিখিব, ‘কোর্‌চেন’ না লিখিয়া ‘কোরচেন’ লিখিব।

আমি কোরি তুই কোরিস  আমি কোরচি  তুই কোরচিস

তুমি করো সে করে তুমি কোরচ সে কোরচে

আপনি করেন  তিনি করেন আপনি কোরচেন তিনি কোরচেন

আমি কোরলুম (কোরলেম) তুই কোরলি

তুমি কোরলে সে কোরল (কোরলে)

আপনি কোরলেন  তিনি কোরলেন

আমি কোরেচি  তুই কোরেচিস আমি কোরেছিলুম (করেছিলেম)

তুমি কোরেচ সে কোরেচে তুমি কোরেছিলে

আপনি কোরেচেন তিনি কোরেচেন  আপনি কোরেছিলেন