পাতা:বাংলা শব্দতত্ত্ব - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৭০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিবিধ
২৫১

একটা ছোটো কথা বলিয়া লই। ‘অনুবাদিত’ কথাটা বাংলায় চলিয়া গেছে—আজকাল পণ্ডিতেরা অনূদিত লিখিতে শুরু করিয়াছেন। ভয় হয় পাছে তাঁহারা সৃজন কথার জায়গায় ‘সর্জন’ চালাইয়া বসেন।[১]

 বৈশাখ ১৩০৮

আপনার গ্রন্থের নামটি[২] যত ভয়ানক বস্তুটি তত ভয়ংকর নয়। কিন্তু তবুও বোপদেব লোহারাম যখন ভ্রূকুটি করেন তখন হৃৎকম্প হয় না বাংলালেখকদের মধ্যে এমন কয়জন আছে, তবে কি না প্রবাদ আছে দুই কানকাটা গ্রামের মাঝখান দিয়াই অসংকোচে চলে। অনেক লিখিয়াছি সুতরাং আমার অপরাধের অন্ত নাই এখন আর লজ্জা করিয়া কী হইবে।

 বাংলা ভাষার মুশকিল হইয়াছে এই যে ইহাকে একভাষা বলিয়া গণ্য করিলে চলে না। বাংলা শিখিতে হইলে সংস্কৃতও শিখিতে হইবে। সেও সকলে পারিয়া উঠে না— মাতৃভাষা বলিয়া নির্ভয়ে আবদার করিতে যায়, শেষকালে মাতামহীর কোপে পড়িয়া বিপন্ন হয়। মাতা ও মাতামহীর চাল স্বতন্ত্র, এক ব্যাকরণে তাঁহাদের কুলায় না। এ অবস্থায় হতভাগ্য বাঙালির চলে কি করিয়া, পরম পণ্ডিত না হইলে সে কি নিজের ভাষা ব্যবহার করিতে পারিবে না।

 আর একদিকে দেখুন। বাঙালির ছেলেকে ছেলেবেলা হইতে ইংরেজি শিখিতেই হইবে। অল্প বয়স হইতে যে পরিমাণ বাংলার চর্চা করিলে সে অনায়াসে বাংলায় আপনার ভাব প্রকাশ করিতে পারিত সে তাহার ঘটিয়া উঠে না। ইহাদের যদি বলা যায় তোমরা বাংলা লিখিতে পারিবে না তবে কয়জন লোকে বাংলা লিখিবে।

 কারণ, ইহাও সত্য, এখন আমাদের দেশে ইংরেজি শিক্ষা ছাড়া অন্য শিক্ষা

  1. মাসিক সাহিত্য সমালোচনা, বঙ্গদর্শন, বৈশাখ ১৩০৮পৃ ৬১}}
  2. ললিতকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় প্রণীত ‘ব্যাকরণ বিভীষিকা’ গ্রন্থ