পাতা:বাংলা শব্দতত্ত্ব - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৯৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৭৪
বাংলা শব্দতত্ত্ব

করি ভারতের সকল ভাষা হতেই কানাই শব্দে মূর্ধন্যের আক্রমণের আশঙ্কা চলে গেছে। কিন্তু নতুন উপক্রমণিকা-পড়া বাঙালি হয়তো কোন্ দিন কানাই শব্দে মূর্ধন্য ণ চালিয়ে তৃপ্তিবোধ করবেন। এই রকম দুটো-একটা শব্দ তাঁদের চোখ এড়িয়ে গেছে। স্বর্ণের রেফহীন অপভ্রংশ সোনায় তাঁরা মূর্ধন্য ণ আঁকড়িয়ে আছেন, অথচ শ্রবণের অপভ্রংশ শোনা তাঁদের মূর্ধন্যপক্ষপাতী তীক্ষ্ণ দৃষ্টি এড়িয়ে গেছে। ব্যাকরণের তর্ক থাক্, ওটাতে চিরদিন আমার দুর্বল অধিকার। কৃষ্ণ শব্দের অপভ্রংশে কোনো প্রাকৃতে কাণ্‌হ বা কাণ থাকতেও পারে, যদি থাকে সেখানে সেটা উচ্চারণের অনুগত। সেখানে কেবল লেখবার বেলা কাণ্‌হ এবং বলবার বেলা কান্‌হ কখনই আদিষ্ট হয় নি। কিন্তু প্রাকৃত বাংলায় তো মূর্ধন্য ণয়ের সাড়া নেই কোথাও। মুদ্রাযন্ত্রকে দিয়ে সবই ছাপানো যায় কিন্তু রসনাকে দিয়ে তো সবই বলানো যায় না। কিন্তু যে মূর্ধন্য ণয়ের উচ্চারণ প্রাকৃত বাংলায় একেবারেই নেই, গায়ে পড়ে তার আনুগত্য স্বীকার করতে যাব কেন? এই পাণ্ডিত্যের অভিমানে শিশুপালদের প্রতি যে অত্যাচার করা যায় সেটা মার্জনীয় নয়। প্রাকৃত বাংলায় মূর্ধন্য ণয়ের স্থান কোনোখানেই নেই এমন কথা যে-সাহসে কর্তৃপক্ষ ঘোষণা করতে পেরেছেন সেই সাহস এখনো আরো কতক দূর তাঁদের ব্যবহার করতে হবে। এখনো শেষ হয় নি কাজ।[১]

 আষাঢ় ১৩৪৪

  1. আমি “প্রাকৃত বাংলা” শব্দটি ব্যবহার করে আসছি। সেদিন এর একটা পুরাতন নজির পেয়ে আশ্বস্ত হয়েছি বুলবুল নামক পত্রে। যথা- “দেসি ভাসে পদবন্ধে গাহি পরকৃতে।
     প্রবন্ধটির রবীন্দ্রনাথ-কৃত একটি সংশোধিত প্রুফ রবীন্দ্রভবনে রক্ষিত আছে। বর্তমান সংস্করণে ওই সংশোধন অনুযায়ী পাঠ গৃহীত।