পাতা:বাংলা শব্দতত্ত্ব - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩৬১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩৩৬
বাংলা শব্দতত্ত্ব

আমাদের বোধ হয় যে, উহা ‘কুটিল নিষাদ’ হইবে। অথবা কূট (অর্থাৎ ফাঁদ) শব্দজ একটা কিছু শব্দ ছিল, তাহাই ভ্রমক্রমে ‘কুটুম্ব’ শব্দে পরিণত হইয়াছে, এবং ‘বিবাদ’ শব্দ বোধ করি, ‘নিষাদ’ হইবে। আর-একটি অক্ষরভুলের উদাহরণ তুলিয়া দিই—

হরি যদি ফেরি পুছসি ধনি তোয়।
ইঙ্গিতে নিবেদন জানাওবি সোয়।
যব চিতে দেখবি বড় অনুরাগ।
তৈখনে জানয়বি হৃদয়ে জনু লাগ।

সং ৯১, পৃ. ৭৮

 বিরহিণী রাধিকা কৃষ্ণের নিকট দূতী পাঠাইতেছেন। পাছে অপমান হইতে হয় এইজন্য প্রথমে ইঙ্গিতে কৃষ্ণের মনের ভাব বুঝিতে দূতীকে অনুরোধ করিতেছেন। রাধিকার ইচ্ছা, তাঁহার প্রতি কৃষ্ণের অনুরাগ লক্ষিত হইলে তবেই যেন মুখ ফুটিয়া সমস্ত নিবেদন করা হয়। সমস্ত গীতটির এই ভাব। উপরি-উদ্‌ধৃত শ্লোকের চতুর্থ চরণটি বুঝা যায় না। কিন্তু ‘জানয়বি’ শব্দ যদি ‘জানাওবি’ হয় তবে এইরূপ অর্থ হয়— যখনি চিত্তে বড়ো অনুরাগ দেখিবি, তখনি জানাবি; হৃদয়ে যাহাতে লাগে। অর্থাৎ সেই সময় জানাইলেই হৃদয়ে লাগিবে।

 রাধিকা ছল করিয়া সখীদের কহিতেছেন— কাল ঘুমাইয়াছিলাম, এমন সময় এক পুরুষ আসিলেন, তাঁহার অরুণ আঁখি ও লোহিত অধর দেখিয়া ভয়ে আমার কেশপাশ বিশৃঙ্খল হইয়া গেল, কপালে কাজল ও মুখে সিন্দুর লাগিল।

এক পুরুখ পুন আওল আগে।
কোপে অরুণ আঁখি অধরক রাগে।
সে ভয়ে চিকুর চির (চীর?) আনহি গেল।
কপালে কাজর মুখে সিন্দুর তেল।

সং ১০৯, পৃ. ৯৩

 সম্পাদক টীকা করিতেছেন সেই ভয়ে চিকুর (বিদ্যুৎ) চির (দীর্ঘকালের জন্য) অন্যত্র গমন করিল। এ টীকার কি কোনো অর্থ আছে? কোনো কথা নাই, বার্তা নাই, এমন সময় সহসা বিনামেঘে একটা বিদ্যুৎ খেলাইয়া যাইবে কেন, আমরা ভাবিয়া পাই না। চিকুর অর্থে কেশ। রাধিকা বলিতেছেন,