পাতা:বাংলা শব্দতত্ত্ব - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩৬৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩৪৪
বাংলা শব্দতত্ত্ব

প্রবন্ধ লেখক তাঁহাকে বিদ্রূপ করিয়াছেন, কিন্তু এ-সকল টীকা পাঠ করিয়া তিনি কি বলিবেন বলিতে পারি না।

শ্রীযােগেন্দ্রনারায়ণ রায়

 প্রত্যুত্তর অর্থ ব্যাখ্যা করা এক, আর অর্থ তৈরি করা এক। অর্থ সহজ করিবার জন্য তাহাতে নূতন কথা যােগ করা কিছু মন্দ কাজ নহে, কিন্তু মূলে যে কথা নাই সেই কথা যােগ করিয়া অর্থ গড়িয়া তােলা দোষের নহে তাে কী? লেখক আবার পাছে ভুল বুঝেন এই নিমিত্ত স্পষ্ট করিয়া উদাহরণ দিয়া বলিতে হইল। মনে করুন, ‘সময় বসন্ত, কান্ত রহুঁ দূরদেশ’ এই ছত্রটির অর্থ বুঝাইতে গিয়া আমি যদি বলি, ‘বসন্তের ন্যায় এমন সুখের সময়ে, প্রাণের অপেক্ষা যাহাকে ভালােবাসি, সে কান্ত দূরদেশে রহিয়াছেন’, তাহাতে দোষ পড়ে না; যদিও কথা বাড়াইলাম তথাপি কবির ভাবের অনুসরণ করিয়া চলিয়াছি। কিন্তু আমি যদি বলি ‘বসন্ত অতিক্রম করিয়া গ্রীষ্ম আসিয়া পড়িল, তথাপি আমার কান্ত দূরদেশে রহিয়াছেন’ তাহা হইলে অতিরিক্ত কথা ব্যবহারের জন্য আমি দোষী।

শ্রীরবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রস্তাব-লেখক

 উত্তর―

‘লীলা-কমলে ভ্রমরা কিয়ে বারি
চমকি চললু ধনি চকিত নেহারি।’

 লেখক লিখিয়াছেন ‘লীলা-কমলের দ্বারা ভ্রমরকে নিবারণ’ ইত্যাদি। আমাদের বিবেচনায় সম্পাদকের অর্থই বিশদ হইয়াছে। রাধিকার হস্তে লীলাকমল কোথা হইতে আসিল? তিনি কি ভ্রমর তাড়াইবার জন্য লীলা-কমল হস্তে করিয়া বেড়াইতেন? সম্পাদক ‘ন্যায়’ ‘সহিত’ প্রভৃতি শব্দ ঘর হইতে দেওয়ায় যে মহাপাতক সঞ্চয় করেন নাই তাহা উপরে বলিয়াছি।

শ্রীযােঃ নাঃ রাঃ

 প্রত্যুত্তর- ‘লীলা-কমল’ কোথা হইতে আসিল? তাহা ঠিক বলিতে পারি না, তবে এই পর্যন্ত বলিতে পারি যে তাহা আনাইতে কবির এক ফোঁটার অধিক কালি খরচ হইয়াছিল কি না সন্দেহ। চণ্ডীদাসের এক স্থানে আছে— ‘চলে নীল শাড়ি নিঙ্গাড়ি নিঙ্গাড়ি, পরাণ সহিতে মাের।’ লেখক তো জিজ্ঞাসা করিতে